Lead Newsআন্তর্জাতিককরোনাভাইরাস

পাওয়া গেছে কোভিড-১৯ চিকিৎসার ওষুধ!

আশাবাদী কি হওয়া যায়? পাওয়া কি গেছে কোভিড-১৯ চিকিৎসার ওষুধ?

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সংক্রাম ব্যাধি বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলছেন, করোনার চিকিৎসায় রেমডিসিভিরের কার্যকারিতার ‘সু্স্পষ্ট প্রমাণ’ পেয়েছেন তারা।

বুধবার জিলেড সায়েন্সেসের পরীক্ষামূলক অ্যান্টি ভাইরাল ড্রাগটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল পাওয়ার পর দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে রেমডিসিভির গ্রহণকারীরা অন্যদের তুলনায় কম সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে।

আমেরিকা সরকারের এই প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, যাদের প্লেসবো (নকল ওষুধ) দেওয়া হয়েছে তাদের তুলনায় রেমডিসিভির গ্রহণকারীরা ৩১ শতাংশ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছে। এই ঘটনার পর ওষুধটির কার্যকারিতা নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন ফাউচি। আমেরিকার করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের চিকিৎসক বলেছেন, প্রাথমিক ফল খুবই আশাব্যঞ্জক।

ফাউচি বুধবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটা সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তটা অনেকটা ১৯৮৬ সালের মতো, যখন এইচআইভির ওষুধের জন্য আমরা সংগ্রাম করছিলাম এবং হাতে কিছুই ছিল না। সেবার একটা মানদণ্ড তৈরি হবে।’

বুধবার হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ-এর তত্ত্বাবধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১০৬৩ মানুষের অংশগ্রহণে এই ওষুধের পরীক্ষা হয়। তাদের এক অংশকে দেওয়া হয় রেমডিসিভির, আরেক অংশকে দেওয়া হয়েছিল প্লেসবো। রেমডিসিভির গ্রহণকারীরা গড়ে ১১ দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। আর প্লেসবো চিকিৎসা নেওয়ারা সুস্থ হয়েছেন ১৫ দিনে।

ফাউচি বলেছেন, ‘প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণ করছে করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার সময় কমিয়ে আনতে রেমডিসিভিরের ভূমিকা সুস্পষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক।’ তার মতে, পরীক্ষার ফলাফল ‘প্রমাণ করেছে একটি ওষুধ করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে’ এবং ‘রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ায় আমাদের সামনে নতুন দুয়ার খুলে গেলো’।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি বলছে, পুরো ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা নিশ্চিত হলে তা হবে ‘দুর্দান্ত ফলাফল’, কিন্তু ‘ম্যাজিক বুলেট’ নয়।

অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে ওষুধ, চাপ কমবে হাসপাতালের ওপর এবং আংশিকভাবে লকডাউনও প্রত্যাহার করা যেতে পারে।

আসলে ইবোলার চিকিৎসার জন্য তৈরি হয়েছিল রেমডিসিভির। যদিও রোগটির বিরুদ্ধে এ ওষুধের সুফল মেলেনি। তবে এই ওষুধ করোনায় মৃত্যুহার কমাতে ভূমিকা রাখে কিনা তা প্রমাণিত হয়নি।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, রেমডিসিভির গ্রহণকারীদের মৃত্যুহার যেখানে ৮ শতাংশ, সেখানে প্লেসবো গ্রহণকারীদের মৃত্যুহার ১১.৬ শতাংশ। তবে এই পার্থক্য দিয়ে বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন না এটি আসলেই মৃত্যু প্রতিরোধ করে কিনা।

ফাউচি আশাবাদী হলেও তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট নয়, কারা এই ওষুধ থেকে সুবিধা পাবে বেশি। বিবিসির প্রতিবেদনে এমন কিছু প্রশ্ন ‍উঠেছে, যার উত্তর মেলেনি পরীক্ষার ফলাফল থেকে- রেমডিসিভির কি কেবল দ্রুত সুস্থ করে? নাকি এটি গ্রহণ করলে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে হয় না? তরুণ নাকি বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি ভালো কাজ করে? আর অন্য রোগের বেলায় এর আচরণ কেমন হয়?

যখন পুরো ফলাফল প্রকাশ করা হবে, তখন এই প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, একটি ওষুধের কারণে যদি কারো ইনটেনসিভ কেয়ারে চিকিৎসা না লাগে তাহলে হাসপাতালের ঝুঁকি কমবে এবং সামাজিক দূরত্বও ততটা প্রয়োজন হবে না।

রেমডিসিভির যত দ্রুত সম্ভব সহজপ্রাপ্য করার অনুমোদন দিতে জিলেডের সঙ্গে আলোচনায় বসবে যুক্তরাষ্ট্র ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। কিন্তু এনিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চায়নি তারা।

তবে তাদের সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ‘আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এগুলো চাই। নিরাপদে থাকতে সবকিছু চাই আমরা, দ্রুত আমরা এমন কিছুর অনুমোদন চাই যা কার্যকরী।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − 5 =

Back to top button