জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর কাছে তামাক সাময়িকভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে ১০০ বিশিষ্ট নাগরিকের চিঠি

করোনাভাইরাসের এই মহামারিতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে তামাকের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং এটি সংক্রমণ সহায়ক এই বিবেচনায় সকল তামাকজাত দ্রব্য বিপণন ও বিক্রয় সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন দেশের ১০০ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

বৃহস্পতিবার (৭ মে) তামাকজাত দ্রব্য বিপণন ও বিক্রয় সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন তারা।

চিঠিতে বিশিষ্ট জনেরা উল্লেখ করেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসাসেবা প্রদানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তামাক ব্যবহারের কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া তামাকজাত দ্রব্য ফুসফুসের সংক্রমণ ও অসুস্থতা বাড়ায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, যা করোনা সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই সতর্কতা আমলে নিয়ে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বতসোয়ানা ইতোমধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে এই বৈশ্বিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর অনুরোধ জানান।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্ট জনদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান, সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সাংবাদিক নেতা এবং টিভি টুডে’র এডিটর ইন চিফ মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, একুশে পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, দেশ টিভির সম্পাদক সুকান্ত গুপ্ত অলক, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক আবু তাহের প্রমুখ।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের কারণে প্রতিবছর ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বর্তমানে দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে এবং প্রায় ৪ কোটি ১০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজ বাড়িতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। এই বিপুল জনগোষ্ঠী বর্তমানে মারাত্মকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ধরনের রোগীর চিকিৎসায় অনেক সময় কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থার দরকার হয় এবং রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সুতরাং এই মহামারির মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিপণন ও বিক্রয় অব্যাহত থাকলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর মারাত্মকভাবে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে এবং এতে করোনাভাইরাস সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মহামারি চলাকালীন জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল তামাকজাত দ্রব্য বিপণন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে ।

তামাকবিরোধী সংগঠন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, বিসিসিপি, এসিডি, ইপসা, এইড ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট, বিএনটিটিপি, বিটা, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, প্রত্যাশা, টিসিআরসি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, উফাত, তাবিনাজ, ভয়েস, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা এবং প্রজ্ঞা সম্মিলিতভাবে এই কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 4 =

Back to top button