রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা বারবার ব্যর্থ হচ্ছেঃ জাফরুল্লাহ

প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, “ভালো কাজ একা একা করা যায় না। এর জন্য একটি সর্বদলীয় কমিটি দরকার। যাতে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ যেমন থাকবে, তেমনি কৃষক-শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বও থাকবে।”

রোববার (৩ মে) নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘কোভিড ১৯: বৈশ্বিক মহামারি ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে বৈঠকস্থল ও অনলাইনে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজমুদার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, ডা. লিয়াকত আলী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রমুখ।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশের দুই কোটি পরিবার অর্ধাহারে রয়েছে। যদিও সরকার বলছে তাদের গুদামে যথেষ্ট খাদ্য আছে। কিন্তু আমাদের মনে হয় সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে তাদের কাছে ত্রাণ যাচ্ছে না। মাত্র ১৭ লাখ টাকা খরচ করে এক হাজার পরিবারের এক মাসের খাবার দেওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, বড় দোকান খুলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাতের হকারদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। গুদাম খালি নেই বলে সরকার কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনতে পারছে না। কিন্তু ২৬ টাকার বদলে ২৮ টাকা দিয়ে কৃষকের পণ্য কৃষকের কাছেই রেখে দেওয়া সম্ভব। এতে কৃষক সরকার এবং উভয়পক্ষ লাভবান হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার যেসব প্রণোদনা ব্যাংকের মাধ্যমে দিচ্ছে, তা মূলত ধনী ও বড় ব্যবসায়ীদের জন্য। মাঝারি বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নয়। যতটুকু রয়েছে ব্যাংকিং জটিলতার কারণে তারা সময় মতো সে সহায়তা পাবেন না। সে সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতারও অভাব রয়েছে। এজন্য এখনই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজমুদার বলেন, ‘এখানে দুইটি বিষয় রয়েছে। একটি মানুষের জীবন, অন্যটি তাদের জীবিকা। জীবন রক্ষার ইস্যুতে সরকার সফল হতে পারেনি। তাদের প্রস্তুতির অভাব ছিল। যারা দেশের বাইরে থেকে এসেছে তাদেরকে কোয়েরেন্টিনে রাখার বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করতে পারেনি। সে সঙ্গে ২৬ মার্চ ছুটির আগে একদল মানুষ ঢাকার বাইরে গিয়েছে, ৪ এপ্রিল একদল ফিরেছে, তারা আবার ঢাকার বাইরে গিয়েছে। এতে করে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে।

নিজের বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের পক্ষে ৮ দফা প্রস্তাব পেশ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- দুই কোটি পরিবারের ৩ মাসের খাবার নিশ্চিত করার জন্য সরাসরি খাদ্য অথবা অর্থ সহায়তা প্রদান এবং মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ২ কোটি মানুষের জন্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ডাক্তার, নার্স তথা সকল স্বাস্থকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনু্যায়ী সুরক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। দরিদ্র কৃষকদের সমস্ত ঋণ মাফ করে দিতে হবে। ত্রাণ বিতরণ, টিসিবি’র কার্যক্রম তদারকি, রেশনিং এবং কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার দায়িত্ব সামরিক বাহিনীর হাতে দিতে হবে।

‘৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া স্থানীয় প্রশাসন এবং তথাকথিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাড়িওয়ালাদের প্রদান করতে হবে। ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের মানুষদের বাড়ি ভাড়ার অর্ধেক সরকারকে বহন করতে হবে। প্রণোদনার নামে যে ঋণ প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা যেন সঠিকভাবে বিতরণ করা হয় তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এবং বর্তমান গভর্ণর ও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিবর্গ, এনজিও প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ, গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিসহ একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।

‘শিক্ষার খরচ, বেতন ইত্যাদি আগামী ৬ মাসের জন্য মওকুফ করে দিতে হবে। মাদ্রাসা ভিত্তিক লিল্লাহ বোর্ডিং, বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত এতিমখানা এবং বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে আগামী ৩ মাসের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। ত্রাণ চুরি এবং স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির অভিযোগগুলোকে মানবতাবিরোধী হিসেবে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং এর সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ব্যক্তিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য এখনই দেশের অর্থনীতিবীদ, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবী, এনজিও প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৩-৫ বছর মেয়াদী একটি স্থায়ী ‘জাতীয় পুনর্গঠন কমিটি’ গঠন করতে হবে যা যেকোনো রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও বহাল থাকবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × one =

Back to top button