Lead Newsআন্তর্জাতিক

প্রশাসনিক ক্ষমতার সিংহভাগ চাইছে তালেবানঃ মার্কিন রাষ্ট্রদূত

শুধু যে ঘাঁটির পুনর্দখল তা নয়, আফগানিস্তানের প্রশাসনিক ক্ষমতারও সিংহভাগ চাইছে তালেবান। মঙ্গলবার অ্যাসপেন নিরাপত্তা ফোরামের ভার্চুয়াল মঞ্চে এমনটাই মন্তব্য করেন সে দেশে নিযুক্ত বিশেষ মার্কিন দূত জালমে খলিলজাদ। আশঙ্কা যে অমূলক নয়, কাবুলসহ একাধিক শহর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেটারই যেন প্রমাণ রাখছে তারা।

আফগান প্রশাসন সূত্রের খবরে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে হেরাত প্রদেশে ভারতের তৈরি সালমা বাঁধেও হামলার পরিকল্পনা করেছিল তালেবান। দিল্লি-কাবুলের বন্ধুত্বের নিশান এই বাঁধ লক্ষ্য করে গত মাসে রকেট হামলা চালিয়েছিল তালেবান। সেগুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। মঙ্গলবার ফের তেমনই টার্গেট ছিল। কিন্তু আফগান বাহিনী রুখে দাঁড়াতেই তালেবান যোদ্ধারা রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন তালেবান মারাও গিয়েছে বলে দাবি কাবুলের।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা নাগাদ কাবুলে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লা খান মোহাম্মদির বাড়িতে গাড়ি-বোমা ফাটায় তালেবান। ঘটনার সময় মন্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না। তার পরিবারকেও যথাসময়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। তবে প্রশাসনের দাবী ওই হামলায় অন্তত আট জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অন্তত ২০ জন। সংঘর্ষে চার তালেবান নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে কাবুল।

মন্ত্রী নিজে টুইট করে বলেন, ‘চিন্তার কিছু নেই। সব ঠিক আছে।’ কিন্তু হামলার দায় স্বীকার করে তালেবান যেভাবে আরো কয়েকজন সরকারি নেতা-মন্ত্রী-আমলাকে টার্গেট করার হুমকি দিয়েছে, তাতে আতঙ্কের কালো মেঘ দেখছেন অনেকেই। প্রশাসন ও তালেবান- দু’পক্ষকেই অবিলম্বে হিংসা বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ।

মাসখানেক আগে দোহায় আফগান-তালেবান শান্তি আলোচনা ভেস্তে গিয়েছে। এ দিকে চলতি মাসের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোর কাজ গোটতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এতেই যেন দ্বিগুণ উৎসাহে যুদ্ধে নেমেছে তালেবানরা। প্রায় নিয়ম করে প্রতিদিনই বড় বড় শহরে হামলা চালাচ্ছে তারা। মৃত্যুমিছিল শুরু হয়ে দিয়েছে। তালেবান-সেনা সংঘর্ষের মাঝে পড়ে হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে।

জাতিসঙ্ঘের আবার দাবি, তালেবানকে পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে বেশি ক্ষতি করছে আফগান বাহিনীই! আফগান মুলুক ছাড়ার আগে দফায় দফায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রও। সব মিলিয়ে আফগানিস্তান সেই আফগানিস্তানেই। অভিযোগ, ২০ বছর সেনা রেখেও তালিবান-দমনে কার্যত ব্যর্থ যুক্তরাষ্ট্র।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই ভারতের কাছেও মধ্যস্থতা দাবি করছে কাবুল। আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী চাইছেন, জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যেন আফগান-পরিস্থিতি তুলে ধরে ভারত। মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথেও এক প্রস্তবে কথা বলেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরফ ঘানি। ঘটনাচক্রে এর পর-পরই আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন দূত খলিলজাদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে সামরিক পরিস্থিতি, তাতে স্পষ্ট যে সে দেশে নতুন সরকার গঠিত হলে সেখানে ক্ষমতার সিংহভাগ চাইছে তালেবান।’

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দোহায় তালেবানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল, তাতে ব়ড ভূমিকা ছিল এই মার্কিন দূতের। সেই চুক্তি মোতাবেক এ মাসেই ৯৮ শতাংশ সেনা সরিয়ে নিতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু দূতাবাস আর বিমানবন্দরে কিছু থাকবে। তারপর পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছে নয়াদিল্লিও।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 4 =

Back to top button