বৃহস্পতিবার রাতে চেলসির কাছে ম্যানচেস্টার সিটি ২-১ গোলে হেরে যাওয়ায় ৭ ম্যাচ হাতে রেখে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ২৩ পয়েন্টে এগিয়ে থাকা লিভারপুল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত করে।
৩০ বছরের খরা কাটিয়ে ক্লাবটির এমন রূপকথাতুল্য সাফল্যের নেপথ্য কারিগর জার্মান কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। গত মৌসুমে তার অধীনেই চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতে এই ইংলিশ ক্লাব।
উচ্ছ্বসিত ক্লপের এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে লিভারপুল ফুটবল ক্লাবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। সেটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো…
কেমন লাগছে, ইয়ুর্গেন?
ইয়ুর্গেন ক্লপ: ভালো! বেশ ভালো! সত্যি বলতে কি, এখনও সামলে ওঠতে পারিনি; এখনও বুঝে ওঠতে পারিনি (কী ঘটেছে); তবে দারুণ লাগছে। এ এক বিরাট আর দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা।
(শুরু থেকে এ পর্যন্ত) পুরো ব্যাপারটিই দুর্দান্ত, তবে গত (বৃহস্পতিবার) রাতেরটা বিশেষ কিছু। খুবই বিশেষ। লোকে যখন এ নিয়ে বলাবলি করে, হয়তো ভাবে, সামনের ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে জিতে শিরোপাটা নিশ্চিত হলে আরও দারুণ হতো; তবে সত্যি বলতে গত মৌসুমে ৯৭ পয়েন্ট অর্জন, সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়, আর এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন লিগের লড়াই শুরুর আগেই ইংলিশ লিগ জয়- এটা আমি যত দ্রুত সম্ভব নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম। ফলে গত রাতটা সত্যিই দারুণ কেটেছে।
এ এক বড় স্বস্তি, এ এক দারুণ স্বাধীনতার স্বাদ… ঠিক কী বলে যে বোঝাব, বুঝতে পারছি না! দারুণ, দারুণ!
গত রাতে আপনারা ক্লাবের সবাই একসঙ্গে এ শিরোপা উদযাপন করেছেন, ব্যাপারটি কেমন ছিল?
ক্লপ: দেখুন, কাল রাতে আমাদের সঙ্গে আরও অনেক লোকের যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটা সিদ্ধান্তে আমাদের পৌঁছাতেই হয়েছে। সিদ্ধান্তটা সবার। সেই মুহূর্তে মেলউডে (লিভারপুল ফুটবল ক্লাবের ট্রেনিং গ্রাউন্ড) যারাই ছিলেন, এবং যাদের দুবার (কোভিড-১৯-এর) পরীক্ষা করা হয়েছে, শুধু তারাই ঢুকতে পেরেছেন। অন্য কেউ নয়। এ কারণে নিজেদের পরিবার ফেলেই উদযাপন করতে হয়েছে আমাদের। কেউই নিজের স্ত্রীকে ডাকিনি। এটি স্রেফ টিম আর স্টাফদের উদযাপন; তবে আমাদের যতটা সম্ভব কম মাত্রায়ই করতে হয়েছে।
আমরা সবাই যদি ওই মুহূর্তে যে যার বাসায় থাকতাম, কী হতো- ভাবতে পারছি না। হ্যাঁ, পরিবারের সঙ্গে থাকলেও এক ধরনের একাই থাকতাম; কেননা, খেলোয়াড়রা তো পাশে থাকত না তখন। তাই উদযাপনটি দারুণ হয়েছে। এটার আয়োজন করার মতো পর্যাপ্ত সময় নিশ্চয় কারও হাতে ছিল না। তবে ক্রিস্টাল প্যালেসের সঙ্গে ম্যাচের পর আমরা মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করার চেষ্টা অন্তত করব- এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
(ম্যানচেস্টার সিটির হেরে যাওয়া এবং লিভারপুলের শিরোপা নিশ্চিত হওয়া ম্যাচটির) শেষ বাঁশি বাজার সেই মুহূর্তটি দারুণ, বিরাট এক আবেগের মুহূর্ত ছিল।
[embedyt] https://www.youtube.com/watch?v=WHEthsO7T7w[/embedyt]
বিরাট এক প্রত্যাশার ভার নেমে গেল, তাই না? লিভারপুলের এই (ইংলিশ লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার) ইতিহাস আছে ঠিকই, তবে আপনি সেটি নতুন করে লেখালেন, তা যেন অনেকটাই সেই ইতিহাসকে আরও বড় করে তুলেছে…
ক্লপ: হ্যাঁ, তবে আমার আগে যারা ম্যানেজার (কোচ) ছিলেন, তাদের সঙ্গে এটা ভালো তুলনা হলো না; কারণ, আমি একদম ঠিক সময়টিতেই (এই ক্লাবে) এসেছি। আমি নিশ্চিত নই প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে ১০ বছরের ব্যাপারটাকে কেমন দেখাবে, কেননা, মানুষের স্মৃতিতে এ ঘটনা হয়তো টাটকাই রয়ে যাবে।
আমাদের এমন দর্শকও রয়েছেন, যারা তাদের নিজেদের গল্প, নিজেদের ইতিহাস রচনা হতে দেখতে চান। এই চাওয়াই হয়তো এটাকে (লিভারপুলের শিরোপাজয়) সহজ করে তুলেছে, কে জানে!
[embedyt] https://www.youtube.com/watch?v=_QiQwXWI31k[/embedyt]
(কোনো খেলোয়াড় নয়, বরং) স্বয়ং লিভারপুল ক্লাবটিই এখন তারকা, এটিই আপনার সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর অন্যতম; তাই না? ব্যক্তিগত তারকা চর্চার বালাই নেই…
ক্লপ: হ্যাঁ; তবে ওই ব্যক্তিমানুষগুলো মিলেই একটা টিম। এটি ব্যক্তি-খেলোয়াড়দের ব্যাপারও; কেননা, তাদের প্রভাবকে আমরা ছোট করে দেখতে পারি না। তবে একটা টিম হয়ে ওঠার বিষয়টি সত্যিকারের প্রেরণা হিসেবে কাজ করা উচিত।
আপনি যদি আমাকে ৫০ লাখ খেলোয়াড় দেন, সেখান থেকে আমি এই ২৫-৩০টা ছেলেকেই বেছে নিতে চাইব, আর তাদের নিয়েই জিততে চাইব। কেননা, তারা পরস্পর ভীষণ রকমের ঘনিষ্ঠ এবং তারা জানে, এত উঁচু পর্যায়ের আত্মবিশ্বাস কী করে ধরে রাখতে হয়।
ফুটবলই আমার জীবনের সেরা শিক্ষক। যখন আমি খেলোয়াড় ছিলাম, লোকের তখন আমাকে দরকার ছিল; কিন্তু এখন (ম্যানেজার হওয়ার পর) আমাকে তাদের এতটা দরকার নেই যে, আমাকে ছাড়া তারা চলতে পারবে না; আর এটিই আমাকে আমি হয়ে ওঠার স্বাধীনতা দিয়েছে।