ধর্ম ও জীবন

ফেরেশতারা যাদের উপর অভিশাপ দেন

ফেরেশতারা যাদের উপর অভিশাপ দেন

ফেরেশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর নূর বা ঐশী আলো থেকে। তাঁরা সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত থাকেন। কখনো অবাধ্যতায় লিপ্ত হন না। ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে যা-ই প্রার্থনা করেন তা-ই কবুল করা হয়। আল্লাহর এমন কিছু প্রিয় বান্দা আছেন, যাঁদের জন্য ফেরেশতারা প্রতিনিয়ত দোয়া করে থাকেন। আবার এমন কিছু দুর্ভাগা ও হতভাগা ব্যক্তি আছে, যাদের জন্য ফেরেশতারা বদদোয়া করে থাকেন। নিম্নে তাদের নিয়েই আলোচনা করা হলো—

কাফির মুরতাদ

যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অস্বীকার করে এবং এর ওপর মৃত্যুবরণ করে, তাদের জন্য রয়েছে অভিশাপ। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা কুফরি করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সব মানুষের লানত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬১)

ইলম গোপনকারী

যারা ইলম (জ্ঞান) গোপন করে বা বিকৃত করে, তাদের জন্য আছে কঠিন হুঁশিয়ারি ও ফেরেশতাদের অভিশাপ। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমার নাজিলকৃত উজ্জ্বল নিদর্শনাবলি ও হেদায়াত গোপন করে—যদিও আমি কিতাবে তা মানুষের জন্য সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছি, তাদের প্রতি আল্লাহ লানত বর্ষণ করেন এবং অন্য লানতকারীরাও (ফেরেশতারা) লানত করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৯)


যারা সাহাবাদের গালি দেয়

সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন রাসুলের বিশ্বস্ত সহযোগী। তাঁদের ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাঁরা ছিলেন প্রকৃত দিনের ধারক ও বাহক। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি যখন বিদায় নেব তখন আমার সাহাবাদের ওপর ওয়াদাকৃত সময় এসে সমুপস্থিত হয়ে যাবে (অর্থাৎ ফিতনা-ফাসাদ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগে যাবে)। আর আমার সাহাবারা সব উম্মতের জন্য রক্ষাকবচ স্বরূপ। আমার সাহাবারা যখন বিদায় হয়ে যাবে তখন আমার উম্মতের ওপর ওয়াদাকৃত বিষয় উপস্থিত হবে।  (মুসলিম, হাদিস : ৬৩৬০)

রাসুলের প্রিয় সাহাবাদের যারা গালি দেবে তাদের জন্য অভিশাপ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যারা আমার সাহাবিকে গালি দেবে তাদের ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সব মানুষের পক্ষ থেকে অভিশাপ।’ (তাবারানি, হাদিস : ১২৭০৯)


অস্ত্র তাককারী

কোনো মুসলিমের প্রতি ইচ্ছাকৃত বা খেলার ছলে অস্ত্র তাক করা নিষিদ্ধ। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি (লৌহ নির্মিত) মারণাস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত করে সে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত ফেরেশতারা তাকে অভিসম্পাত করতে থাকে। যদিও সে তার আপন ভাই হয়। (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬০)


ওয়াদা ভঙ্গকারী

মুমিন কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করতে পারে না। ওয়াদা ভঙ্গ করা মুমিনের কাজ নয়। ওয়াদা ভঙ্গকারীর ওপর ফেরেশতারা অভিশাপ করেন।

আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, মুসলমান কর্তৃক নিরাপত্তাদানের অধিকার সবার ক্ষেত্রে সমান। তাই যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দেওয়া নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করবে, তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত এবং সব ফেরেশতা ও মানুষের। আর কবুল করা হবে না তার কোনো নফল কিংবা ফরজ ইবাদত। (বুখারি, হাদিস  ১৮৭০)

অবাধ্য স্ত্রী

স্বামী স্ত্রী একে অন্যের পোশাকস্বরূপ। পারস্পরিক ভালোবাসা আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামত। একে অপরের অটুট বন্ধনের মাঝে কখনো চিড় ধরে, সম্পর্কের মাঝে ভাটা পড়ে—এটা স্বাভাবিক। কিন্তু একে অস্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া অপরাধ। কোনো নারী যদি তার স্বামীর ওপর রাগ করে শয্যা ত্যাগ করে, তাঁকে আহ্বান করা সত্ত্বেও সাড়া না দেয়, তার জন্য অভিশাপ। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, স্বামী যখন স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে এবং সে না আসে তার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে রাত্রি যাপন করে, সে স্ত্রীর প্রতি ফেরেশতারা ভোর হওয়া পর্যন্ত লানত করতে থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৪৩৩)


হত্যার ন্যায়বিচারে বাধাপ্রদানকারী

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অথবা পাথর, কোড়া অথবা লাঠি ছোড়াছুড়ির মাঝে পড়ে নিহত হয়, তার দিয়াত (রক্তপণ) হবে ভুলে হত্যার দিয়াতের মতো, আর যদি ইচ্ছাকৃত হত্যা হয়, তবে তাতে কিসাস (মৃত্যুদণ্ড) ওয়াজিব হবে। আর যদি কেউ এর মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তবে তার ওপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের এবং সব মানুষের লানত। তার ফরজ বা নফল কিছুই কবুল হবে না। (নাসায়ি, হাদিস, ৪৭৮৯)। আল্লাহ আমাদের এসব অভিশপ্ত কাজ থেকে হেফাজত করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 1 =

Back to top button