প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অতীতে বহুবার ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হলেও তা মোছা যায়নি, আর কোনদিনও মোছা যাবেনা।
মুজিববর্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ এর (১) বিধির আওতায়
প্রস্তাব উত্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ইতিহাস আসলে মুছে ফেলা যায়না। ইতিহাসও প্রতিশোধ নেয়। আজকের ইতিহাস এবং সেই নাম আর কেউ মুছতে পারবেনা, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের সেই বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন,‘ সেদিন কেবল একজন রাষ্ট্রপতিকেই হত্যা করা হয়েছে তা নয়, আমার ১০ বছর বয়সী ছোট ভাইটিও খুনীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। আমি ও রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যাই। তাওতো দেশে ফেরায় আমাদের অনেক বাঁধা ছিল। তারপরেও আমি ফিরে আসতে পারায় এবং সরকার গঠন করতে পারায় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।
নিজের ওপর বার বার হত্যা প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সরকার গঠন প্রসংগে বলেন, ‘জনগণ সেই সুযোগটা দিয়েছে বলেই আজকে আমরা তাঁর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করতে পারছি, আওয়ামী লীগ সরকারের রয়েছে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীও ২০২১ সালে আমরা উদযাপন করবো।’
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা এবং জাতির পিতার প্রতি জন্মশতবার্র্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদনে’ এই প্রস্থাবটি সংসদ নেতা নিজেই উত্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ১৪৭ এর (১) বিধির সাধারণ প্রস্তাবে যে বিষয়টি তুলে ধরেন তা হল- “সংসদের অভিমত এই যে, ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপতি, বাঙ্গালির অবিসংবাদিত মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙ্গালী জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। কিন্তু অন্যায়ের সাথে কখনো আপস করেননি।”
“১৯৪৭-৪৮ থেকে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা ১৯৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন- দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম ও আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১ এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।”
“বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলার নিরস্ত্র জনগণ ঘরে ঘরে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে দুর্গ গড়ে তুলেছিল। ২৬ মার্চ ১৯৭১ এর প্রথম প্রহরে জাতির পিতা শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান লাভ করে। বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। লাল-সবুজের পতাকা ও সংবিধান।”
প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রস্তাবে বলেন, “বঙ্গবন্ধু বিশ্বসভায় বাঙ্গালিকে আত্মপরিচয় নিয়ে গর্বিত জাতিরূপে মাথা উঁচু করে চলার ক্ষেত্র রচনা করেছেন। স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার জন্য মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন তিনি। সেই সময়কালেই বাংলাদেশের উন্নয়নের সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন তিনি।”
বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং সংসদ নেতা আরো বলেন, “২০২০ সালে জন্মশতবার্ষিকীতে মুজিব বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক এবং কর্মজীবন ও দর্শনের উপর জাতীয় সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হোক।”