বাংলাদেশি গরুর ওপর নজর পড়েছে তুরস্কের
একটা সময় কুরবানির ঈদ আসলেই গরুর জন্য ভারতের দিকে চেয়ে থাকতো বাংলাদেশ। এখন সেই দৃশ্য বদলে গেছে। বাংলাদেশ গরু পালনে সফলতা পেয়েছে। এখন আর ভারতীয় গরুর জন্য মুখাপেক্ষি থাকতে হয় না। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ চাইলে এখন গরুর মাংস রপ্তানিও করতে পারে। এমনি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে সরকারের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য তুরস্ক নিজস্ব কার্যালয় স্থাপন করতে চায় বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তুরস্ক বলছে, কার্যালয় স্থাপন করে কর্মপরিচালনা করলে বাণিজ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অনেকগুণ বেড়ে যাবে। তুরস্কের এ প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার তুরস্কের আঙ্কারায় দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতের সাথে অর্থমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতে এসব কথা হয়। অর্থমন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়, খবর জাগো নিউজ।
ফুয়াত ও কামালের আলোচনায় বাংলাদেশে উৎপাদিত গরুর বিষয়টিও উঠে আসে। তুরস্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেহেতু বাংলাদেশ গরু উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে এবং গুণগত দিক থেকে যেকোনো দেশের তুলনায় উৎকৃষ্ট মানের মাংস উৎপাদন করছে, সেহেতু এগুলোও রফতানি বাণিজ্যের আওতায় আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে হালাল সার্টিফিকেশনের যে প্রয়োজনীয়তা সেক্ষেত্রে তুরস্ক বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান করতে পারে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি খাত, অ্যাগ্রো প্রসেসিং, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, ফ্রুট প্রসেসিং বিশেষ করে আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস প্রসেসিং এর মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়াতে পারে এবং সেক্ষেত্রে তুরস্ক সহায়তা করতে পারে বলে উল্লেখ করেন ফুয়াত ওকত।
তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ২০১০ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তখন তুরস্কে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য ছিল ৪০০ মিলিয়ন। তখন এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, এটিকে ৩ বিলিয়নে উন্নীত করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে বিশেষ করে, শুল্ক বাধার কারণে বাংলাদেশের রফতানি তেমন বাড়েনি, যা বর্তমানে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। এটাকে কিভাবে ৩ বিলিয়ন ডলার করা যায় সে বিষয়েও আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে ফুয়াত বলেন, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একে অন্যের প্রতিযোগী না হয়ে ব্যবসা করতে হবে। যেসব দ্রব্য উৎপাদনে তুরস্ক নিজেই ভালো করছে, সেসব দ্রব্য নয় বরং অন্যান্য দ্রব্য এবং যেগুলোর প্রতি তুরস্কের চাহিদা রয়েছে সেই দ্রব্যেগুলো রফতানিতে বাংলাদেশ সুযোগ নিয়ে ভালো করতে পারে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরেন এবং পাশাপাশি বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধাগুলো তুলে ধরলে তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের চামড়াজাত দ্রব্যের প্রতি অত্যাধিক আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে তুলে ধরে কামাল বলেন, পৃথিববীর অন্যতম জনবসতিপূর্ণ একটি ছোট দেশ বাংলাদেশ। এখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত বড় হুমকি; যা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। আর তাই বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবসনের কোনো বিকল্প নেই।
তাই অর্থমন্ত্রী এ সমস্যাটি সমাধানে তুরস্কের সহায়তা কামনা করেন। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে আরও বেশি আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, সমস্যাটি সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করার পাশাপাশি যেহেতু বিতাড়িত এই অসহায় মানুষগুলো মুসলমান, তাই বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো ভাগাভাগি করে তাদের আশ্রয় প্রদান করলে সমস্যা অনেকটাই সমাধান হতে পারে। ভাইস প্রেসিডেন্ট এ বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা করবেন বলে জানান।
এ সময় আর উপস্থিত ছিলেন- তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দিকী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. দাউদ আলী।