BreakingLead Newsআন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখছে না ইইউ

বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়নে বাংলাদেশের নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী না হওয়ার আশঙ্কার কথা উঠে আসায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশনের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র নাবিলা মাসরালি ফরাসি টিভি চ্যানেল ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। প্রথম আলোর প্রশ্নের জবাবেও তিনি একই উত্তর লিখে পাঠান।

যদিও ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে গত বুধবার যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর অন্যতম একটি কারণ হিসেবে ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত বাজেট স্বল্পতার কথা উল্লেখ রয়েছে।

বাজেট স্বল্পতা এই সিদ্ধান্তের কারণ কি না, সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নাবিলা মাসরালি বলেন, ইইউর অনুসন্ধানী দল ও স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নাবিলা মাসরালি আরও জানিয়েছেন, ইইউ বাংলাদেশে একটি স্বাধীন নির্বাচনী অন্বেষণ মিশন পাঠিয়েছিল। মিশনটি গত ৬ থেকে ২২ জুলাই বাংলাদেশ সফর করে। মিশনের দায়িত্ব ছিল স্বাধীনভাবে ও কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তব তথ্য সংগ্রহ করা এবং নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলার যে অঙ্গীকার বাংলাদেশ করেছে, তার সঙ্গে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন মোতায়েন কতটুকু কার্যকর, সম্ভব ও ফলদায়ক হবে তা মূল্যায়ন করা।

ইইউর অন্বেষণ মিশনে চারজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ছিলেন জানিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র বলেন, তাঁরা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নির্বাচন পরিচালনা সংস্থা, বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ, নিরাপত্তা বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিস্তৃত পরিসরের আলোচনা করেছেন। এরপর তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন এবার তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে না।

কমিশনের মুখপাত্রের কাছে নির্দিষ্টভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে এই সিদ্ধান্ত ইইউর বাজেট সীমাবদ্ধতার কারণে কি না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের মন্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, বাজেট স্বল্পতাই এর কারণ।

ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক মো. আরিফউল্লাহ এক টুইটে (এখনকার এক্স) জানান যে কমিশনের মুখপাত্র তাঁকে জানিয়েছেন, ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস (ইইএএস) ওই স্বাধীন প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়েছে।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ইইউ মুখপাত্রের দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে নাবিলা মাসরালি একই উত্তর দেন। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের সরকার ও নির্বাচন কমিশনের চাওয়া সাপেক্ষে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উপযুক্ত বিকল্প কী হতে পারে, তা বর্তমানে ইউরোপীয় কমিশনের বিবেচনাধীন রয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঢাকার রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে যে চিঠি দেন, তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করা হবে কি না, তা এই মুহূর্তে যথেষ্ট স্পষ্ট নয় এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ২০২৩-২৪ সালের জন্য ইইউর বরাদ্দ বাজেট বিবেচনায় বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিশনার জোসেফ বোরেল।

এর মাত্র এক দিন আগে ইউরোপীয় কমিশন এক ঘোষণায় জিম্বাবুয়েতে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তার জন্য দেওয়া ৫০ লাখ ডলারের বরাদ্দ বাতিল করার কথা জানায়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাজেট স্বল্পতার উল্লেখ তাই অনেককেই বিস্মিত করেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 10 =

Back to top button