বাচ্চার দুধ কেনার জন্য মাথার চুল কেটে বিক্রি করলেন মা
দু’দিন ঘরে কোনো খাবার নেই। নেই ১৮ মাসের শিশু বাচ্চার দুধ। এলাকায় নতুন হওয়ায় তেমন কাউকেই চিনেননা তারা। কোথায় ত্রাণ দেয় সেটাও জানা নেই। প্রতিবেশীর কাছ থেকে খবর পেয়ে ত্রাণের জন্য কয়েক জায়গায় গিয়েও পাননি কোনো সহযোগিতা।
রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে পরিচয় হয় এক হকারের (চুল ক্রেতা) সঙ্গে। তাকে মাথার চুল দেখিয়ে দাম জানতে চাইলে ৪০০ টাকা দেওয়া যেতে পারে বলে জানায় ওই হকার। নিজেদের এবং বাচ্চার খাবার যোগাড়ের জন্য শেষমেষ চুল বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেও হকার মাত্র ১৮০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। ওই টাকা দিয়েই শিশুর জন্য দুধ ও এক কেজি চাল কিনে ঘরে ফেরেন সাথী বেগম।
অভাবের কারণে ময়মনসিংহ থেকে চার মাস আগে স্বামীর সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে ঢাকার মিরপুরে আসেন সাথী বেগম। সেখান থেকে দেড় মাস আগে সাভারের ব্যাংক কলোনী মহল্লার নানু মিয়ার টিনশেড বাড়িতে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন তারা।
স্বামী মানিক পেশায় একজন দিনমজুর। তার সামান্য আয়ে সংসার না চলায় নিজেও বাসাবাড়িতে কাজ করতেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে বাড়িওয়ালা তাদেরকে বাহিরে যেতে নিষেধ করে দিয়েছে। দিনমজুর স্বামীও কোন কোন কাজ না পেয়ে বাড়িতে বেকার হয়ে বসে আছেন।
সাথী বেগম বলেন, গত দেড় মাস আগে তার স্বামী মানিকের সঙ্গে সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকায় টিনশেড ভাড়া বাড়িতে উঠেন। তার স্বামী পেশায় দিন মজুর। তিনি নিজেও বাসা বাড়িতে কাজ করেন। কিন্তু করোনায় তাদের সব কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়ির মালিক এখানে থাকে না। তিনি মাসে একবার আসেন। এখানে নতুন আসার কারণে তেমন কারো সঙ্গে পরিচয়ও নেই। তাই বাধ্য হয়েই সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য তিনি চুল বিক্রী করেন।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে অত্যন্ত দু:জনক ও মানবিক ব্যাপারে। তিনি খুব দ্রুত ওই পরিবারে মধ্যে ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন বলেও জানান।
সাভার পৌর মেয়র আব্দুল গনি বলেন, তিনি নিজেও হতদরিদ্রসহ পৌর এলাকায় অনেক জায়গায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন। তবে বাচ্চার দুধ কেনার জন্য নারীর চুল কাটে বিক্রি করার বিষয়ে জানেন না তিনি। ঘটনাটি শুনার পর দ্রুত ওই পরিবারের মাঝে ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন তিনি।