বাবাহারা দুই ভাই রিকশা চালিয়েও এসএসসিতে সফল
দুই ভাই নাইমুর রহমান ও ফাহিমুর রহমান এর বাবা তাদের ছেড়ে যাওয়ার পর দুই ভাইয়ের লেখাপড়া হুম’কির মুখে পড়ে। অনেক দেনায় জর্জরিত ছিল পরিবার। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ থাকায় রিকশা চালিয়ে লেখাপড়ার চালিয়ে গেছেন দুই ভাই।
“যা আয় হয়েছে তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালানোর সঙ্গে সঙ্গে চালিয়েছি চারজনের সংসার। তবে খুব বেশি ভালো ফল আমরা করতে পারলাম না। তবুও যা হয়েছে তাই নিয়েই আমরা সন্তুষ্ট। সামনে এগিয়ে যেতে চাই।” কথাগুলো বলছিলো নাইমুর রহমান।
রোববার (৩১ মে) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ-৪ ও জিপিএ-৩ পেয়েছে সংগ্রামী দুই ভাই নাইমুর ও ফাহিমুর। নগরীর আফিল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন নাইমুর আর ছোট ভাই ফাহিমুর পাস করেছেন মহসিন মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয় থেকে।
গরিব ঘরে জন্ম নিলেও ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড ঝোঁক রয়েছে পড়ালেখার প্রতি। কিন্তু বাবা চলে যাওয়ায় লেখাপড়া হুমকির মুখে পড়লেও অধিক আগ্রহ থাকায় রিকশা চালানো শুরু করেন দুই ভাই। এতে যা আয় হতো তা দিয়েই সংসার চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়ার খরচ চলতো। অবশেষে এসএসসি পাস করেছেন তারা।
মেধাবী এ দুই ভাইয়ের বাড়ি খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর এলাকার কারিকর পাড়ায়। মা মুন্নী বেগম অন্যের বাসায় কাজ করেন। তাদের দুই বোনও রয়েছে। এক বোনের বিয়ে হয়েছে। আরেক বোন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
নাইমুর রহমান জানান, বাবা অনেক ঋণ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এরপর আর কোনো খবর নেননি। মাঝেমধ্যে মোবাইলে কথা হলেও বাড়িতে আসেন না। বাবা চলে যাওয়ার পর মা অন্যের বাসায় কাজ শুরু করেন। কিন্তু তা দিয়ে পাঁচজনের সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে তিন ভাই-বোনের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে দুই ভাইকেই বেছে নিতে হয় রিকশা চালানোর পথ।
তিনি আরো জানান, রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত শরীরে আর পড়া সম্ভব হতো না। স্কুলে যা পড়তাম তাই ছিল মূল পড়া। কোচিং করার কথা কল্পনাও করতে পারিনি। তবে লেখাপড়ায় সহায়তায় এক হৃদয়বান বড় ভাই এগিয়ে আসেন। তিনি বিনামূল্যে পড়িয়েছেন।
অদম্য মেধাবী এ কিশোর জানান, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় টাকার অভাবে দুই ভাইকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। পরে সমস্যার কথা শুনে ফরম পূরণের টাকা দিয়ে সাহায্য করেন ওই বড় ভাই।
ফাহিম জানান, কষ্ট হলেও পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন তারা। এতে উৎসাহ দিয়েছেন তাদের মা। বর্তমানে দুই ভাই অটোরিকশা চালাচ্ছেন।
নাইমুর ও ফাহিমুরকে ফ্রি পড়াতেন খুলনার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের কর্মী জাফরি বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমি গর্বিত। এমন একটি ছেলেকে নির্বাচন করেছিলাম। একদিন এ ছেলের রিকশায় চড়ে পাবলা থেকে খালিশপুর যাচ্ছিলাম। যেতে যেতে তার কথা শুনে চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। ভাড়াও দিয়েছিলাম দ্বিগুণ। সঙ্গে সঙ্গে তাকে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছি। সেই থেকে পরীক্ষা পর্যন্ত আমি তাকে ফ্রি পড়িয়েছি। আর ফরম পূরণের সময় তাদের সহায়তা করেছি।
খুলনার বিএল কলেজের ছাত্রলীগ নেতা মো. মেহেদী হাসান রাসেল বলেন, অনেকের সহায়তায় দুই ভাই এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা দুইজনের কলেজে ভর্তির দায়িত্ব নিয়েছেন।