Breakingবিবিধ

বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে ২৫৫ কিমি সাইকেলে চালিয়ে বাড়িতে শিক্ষিকা

বাবা-মা ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে চান ঢাকায় শিক্ষকতা করা বগুড়ার মেয়ে মৌসুমি আকতার এপি তালুকদার। লকডাউনে সরাসরি পরিবহণ বন্ধ থাকায় অনেকের মত আটকা পড়েছিলেন। তবে নাড়ির টান ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির ইচ্ছা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।

বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ার সত্ত্বেও বাইসাইকেলে দীর্ঘ ২৫৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বগুড়ার সান্তাহারের রথবাড়ি এলাকার বাড়িতে পৌঁছে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন। হতবাক স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী ও এলাকাবাসীরা তার এ সাহসিকতাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এপিকে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন বাড়িতে ভিড় করেন।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমি আকতার এপি তালুকদার বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারের রথবাড়ি এলাকার মৃত আবদুল হাকিম তালুকদারের মেয়ে। তিনি এপি তালুকদার নামে পরিচিত।

গত ২০১৮ সালে ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন। ঢাকার গোলাপবাগে থেকে বনানীর একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। তিনি একাধারে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের রেফারি, সাইক্লিস্ট, অ্যাথলেট ও ম্যারাথনিস্ট। ছোটবেলায় বাইসাইকেল চালানো শিখলেও তিনি মূলত গত ২০১৭ সাল থেকে সাইক্লিস্ট। প্রতিটি প্রতিযোগিতায় তিনি সাফল্য অর্জন করেন।

করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনে ট্রেন ও দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় তিনি স্কুল থেকে ছুটি পেলেও বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে কীভাবে ঈদ করবে তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। করোনা সংক্রমণের আশংকায় তিনি গণপরিবহন উপেক্ষা করেন।

আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আলোচনার এক পর্যায়ে এপি তালুকদার বাইসাইকেলে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বাড়িতে গিয়ে ঈদ করার সিদ্ধান্ত নেন। গত ৩ মে বিকাল ৫.৩৩ মিনিটে তিনি ঢাকার গোলাপবাগের বাসা থেকে বাইসাইকেলে যাত্রা শুরু করেন। সঙ্গে নেন প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র।

পথিমধ্যে জাহাঙ্গীরনগরে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছোট ভাই সিরাজগঞ্জের মীর রাসেল তার সঙ্গে যোগ দেন। তারা দুজন বাইসাইকেল চালিয়ে টাঙ্গাইলে যমুনা সেতুর পূর্ব পাড়ে আসেন। সেতুতে হেঁটে বা বাইসাইকেলে পারাপারের সুযোগ না থাকা তারা একটি কার্গোতে সেতুর পশ্চিম পাড়ে আসেন।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ভুঁইয়াগাড়ি এলাকায় পৌঁছলে রাসেল বাড়িতে চলে যান। এরপর এপি তালুকদার একাই ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সাইকেল চালিয়ে ৪ মে শেষ রাতে বগুড়ার কলোনি এলাকায় পৌঁছেন।

সেখানে বান্ধবী মালার বাড়িতে সেহরি শেষে সকাল ৬.১০ মিনিটে বগুড়ার সান্তাহারের রথবাড়ি এলাকায় বাড়ির দিকে রওনা হন। প্রায় ১৪ ঘণ্টায় ২৫৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বেলা ১০টার দিকে বাড়িতে পৌঁছেন। তবে বৃষ্টির কারণে তার যাত্রায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটে।

পথিমধ্যে বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় পরিচিত একজন ছবি তোলেন। এছাড়া গণবিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও কয়েকটি স্থানে যাত্রা বিরতি করতে হয়েছে। এভাবেই সাইক্লিস্ট মৌসুমি আকতার এপি তালুকদার তার ইচ্ছা পূরণ করেন।

বুধবার দুপুরে মৌসুমি আক্তার এপি তালুকদার জানান, লকডাউনের কারণে ট্রেন ও দূরপাল্লার বাস বন্ধ। গণপরিবহনে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরতে হবে। তাই তিনি তার ‘ভালোবাসা’ বাইসাইকেলে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। এ যাত্রা ছেলেদের জন্য সহজ হলেও মেয়েদের জন্য দূরহ। শুধু নাড়ির টানে রোজা রেখে ও বৈরি আবহাওয়া পেরিয়ে তার শখ পূরণ করেন। মনে প্রচণ্ড শক্তির কারণে রাতে মহাসড়কে একা সাইকেলে চালালেও তার মনে ভয় আসেনি।

তিনি জানান, মহাসড়ক ছয় লেন হওয়ার কারণে তার সাইকেল চালাতে তেমন সমস্যা হয়নি। তবে যমুনা সেতুতে অনুমতি না থাকায় তিনি তার সহ-সাইক্লিস্ট কার্গোতে পার হয়েছেন।

এপি তালুকদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি কৃতি রেফারি, সাইক্লিস্ট, অ্যাথলেট ও ম্যারাথনিস্ট হলেও বগুড়া থেকে কখনও ভালো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। বগুড়া মেয়ে হওয়ার পরও তাকে নওগাঁ পরিচয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হতো। এটা তার জীবনের একটা বড় দু:খ। ভবিষ্যতে তিনি বাইসাইকেলে আরও দূরের পথ পাড়ি দিতে চান।

এপি তালুকদার এমন দু:সাহসিক যাত্রায় সফল হতে সমাজের নারীদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।

বগুড়ার সান্তাহার পৌরসভার প্যানেল মেয়র সার্জিস আলম রতন জানান, এপি তালুকদার নারী হয়েও যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা অভাবনীয়। তিনি রোজা রেখে, বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে বাইসাইকেলে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার এমন সাহসিকতা অন্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 5 =

Back to top button