সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে শনিবার একযোগে ৬৭ সাংগঠনিক জেলায় পদযাত্রা করবে।
যার মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় শক্তি পরীক্ষা করতে চায় দলটি। এজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলা এবং এর অধীনে থাকা ইউনিট নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। পদযাত্রা সফল করতে কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের পাঠানো হচ্ছে তৃণমূলে। তারা পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
আরও জানা যায়, সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো প্রতি সপ্তাহেই নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। রোববার শুধু ঢাকা জেলার পদযাত্রা হবে। সেখান থেকে আবারও নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। ৪ মার্চ নতুন কর্মসূচির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই কর্মসূচিও হবে জনসম্পৃক্ততামূলক। নতুন কর্মসূচি হিসাবে মহানগরের থানা ও ওয়ার্ডে অথবা উপজেলা-থানা-পৌর এলাকায় আবারও পদযাত্রা দেওয়া হতে পারে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, চলমান যুগপৎ আন্দোলনে জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। জনগণ এই সরকারকে আর চায় না। ইউনিয়ন ও মহানগরের পদযাত্রায় ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা তা জানিয়ে দিয়েছে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নইলে জনসম্পৃক্ত চলমান আন্দোলনেই এই সরকারকে বিদায় করে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
‘বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমানো ও দমন-নিপীড়ন বন্ধ এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী গণবিরোধী, ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে’ জেলা পর্যায়ে এ পদযাত্রা হবে। এর আগে সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং ১৩ মহানগরে পদযাত্রার কর্মসূচিও পালন করে দলটি।
জেলা পর্যায়ের পদযাত্রার মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক শক্তি পরীক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও আন্দোলনে আরও সম্পৃক্ত করতে চায় বিএনপি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ইউনিয়ন ও মহানগর পর্যায়ের কর্মসূচি সফল হয়েছে। জেলায়ও সফল হবে। শনিবার প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নেবেন। সে ধরনেরই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, অতীতের মতো শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নিতে উন্মুখ হয়ে আছেন। আশা করছি, জনসম্পৃক্ততামূলক এ কর্মসূচিতে মানুষের ঢল নামবে।
পদযাত্রায় যারা নেতৃত্ব দেবেন : জেলা পর্যায়ের পদযাত্রায় অংশ নেবেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তাদের নেতৃত্বে ৬৭ সাংগঠনিক জেলায় পদযাত্রা বের করা হবে। এজন্য দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় অন্য নেতারা স্ব-স্ব জেলার কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। আর বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা স্ব-স্ব বিভাগের কর্মসূচি সমন্বয় করবেন।
ঢাকা জেলার পদযাত্রা কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মানিকগঞ্জে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গাজীপুরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নারায়ণগঞ্জে ড. আব্দুল মঈন খান, টাঙ্গাইলে অ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান, মুন্সীগঞ্জে অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ। কুমিল্লা দক্ষিণে বরকত উল্লাহ বুলু, কুমিল্লা উত্তরে হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, চাঁদপুরে ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোস্তাক মিয়া।
ময়মনসিংহ দক্ষিণে নজরুল ইসলাম খান, জামালপুরে আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নেত্রকোনায় অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, ময়মনসিংহ উত্তরে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও শেরপুরে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। চট্টগ্রাম উত্তরে আব্দুল্লাহ আল নোমান, বান্দরবানে শামসুজ্জমান দুদু, চট্টগ্রাম দক্ষিণে আবুল খায়ের ভুঁইয়া, নোয়াখালীতে মো. শাহজাহান, ফেনীতে ভিপি জয়নাল, রাঙ্গামাটিতে মাহবুবের রহমান শামীম, খাগড়াছড়িতে মীর মো. নাসির উদ্দিন, লক্ষ্মীপুরে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও কক্সবাজারে লুৎফর রহমান কাজল।
বরগুনায় এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরিশাল উত্তরে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বরিশাল দক্ষিণে মজিবুর রহমান সরোয়ার, পিরোজপুরে বিলকিস জাহান শিরিন, পটুয়াখালীতে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ভোলায় ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ঝালকাঠিতে ডা. রফিকুল ইসলাম। নওগাঁয় মিজানুর রহমান মিনু, পাবনায় অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, বগুড়ায় আবদুস সালাম, রাজশাহীতে হারুন-অর-রশিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ, নাটোরে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জয়পুরহাটে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সিরাজগঞ্জে অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন।
ঠাকুরগাঁওয়ে আমান উল্লাহ আমান, দিনাজপুরে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, গাইবান্ধায় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, রংপুরে হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, পঞ্চগড়ে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, লালমনিরহাটে আসাদুল হাবিব দুলু, কুড়িগ্রামে শামসুজ্জোহা খান, সৈয়দপুরে আনিসুজ্জামান বাবু ও নীলফামারীতে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। রাজবাড়িতে ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসিম, ফরিদপুরে শামা ওবায়েদ ও মাদারীপুরে জহুরুল ইসলাম শাহজাদা মিয়া।
মাগুরায় অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, যশোরে জয়নুল আবেদীন ফারুক, নড়াইলে ড. মামুন আহমেদ, মেহেরপুরে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কুষ্টিয়ায় অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, খুলনায় আজিজুল বারী হেলাল, সাতক্ষীরায় রাশেদা বেগম হীরা, বাগেরহাটে অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ঝিনাইদহে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান ও চুয়াডাঙ্গায় সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া।
হবিগঞ্জে আরিফুল হক চৌধুরী, মৌলভীবাজারে ড. এনামুল হক, সিলেটে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির এবং সুনামগঞ্জে ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। এছাড়া আরও দুটি সাংগঠনিক জেলায়ও এ পদযাত্রা হবে। তবে এসব জায়গায় কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন না। ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, তাদের জেলায় রোববার পদযাত্রা হবে। এ পদযাত্রায় বিএনপির মহাসচিব নেতৃত্ব দেবেন।