সম্মান ও স্বীকৃতি

‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবনের’ তালিকায় বাংলাদেশের যে হাসপাতাল!

‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবনের’ সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালটির স্থাপত্য নকশা। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (রিবা) মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) বিশ্বের ব্যতিক্রমী নকশার তিন নতুন ভবনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছে।

৮০ শয্যার এই ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নকশা করেছেন স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী, যিনি এর আগে আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আরবানা ভবনটি নির্মাণ করেছে।

বিশ্বের ১১টি দেশের ১৬টি ব্যতিক্রমী নতুন স্থাপনা থেকে বাছাই করে এই সংক্ষিপ্ত তালিকা চূড়ান্ত করেছে রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারের পাঁচ সদস্যের জুরি বোর্ড। দ্বিবার্ষিক এ পুরস্কারের চূড়ান্ত বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আগামী ২ ডিসেম্বর।

রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জুরি বোর্ড বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দক্ষিণ বাংলার জলো পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে সাতক্ষীরার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।

এ স্থাপনার বিশেষত্ব হচ্ছে, স্থানীয় প্রকৌশলীরা স্থানীয়ভাবে তৈরি নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে ভবনটি গড়েছেন। ভবনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রচুর আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুতের সর্বনিম্ন ব্যবহার। পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার রাখা হয়েছে। হাসপাতালের নিরাপত্তা, সহজে যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার প্রত্যক্ষ অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে চালু হয়েছে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। ২০১৩ সালে নকশা করার পর চার বছরে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।

স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, শ্যামনগর এলাকাটি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত। ভবন তৈরির সময় এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়েছে। আমাদের বলা হয়েছে, হাসপাতালের সব সুবিধা থাকতে হবে, কিন্তু যে বাজেট দেওয়া হয়েছে, তা ছিল খুবই কম। এই স্থাপনাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা খুব কম বাজেটের মধ্যে করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে পাওয়া উপাদান, হাতে তৈরি ইট ব্যবহার করা হয়েছে। শ্রমিকরাও সব ওই এলাকার।

কাশেফ মাহবুব জানান, হাসপাতালের ইনডোর এবং আউটডোর দুটি আলাদা জায়গা। দুটি জায়গার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুই রকম। এ কারণে পুরো ভবনকে দুটি ভাগ করার বিষয় ছিল। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম জায়গায় সীমানা প্রাচীর করলে সরু দুটি ভাগ হয়ে যেত। এ কারণে ১০ ফুট চওড়া একটি জলাধারের মাধ্যমে ইনডোর এবং আউটডোর আলাদা করে ফেলা হয়েছে।

বাতাসের গতিপথ হিসাব করে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো করা হয়েছে। ওয়ার্ডের সামনে রাখা হয়েছে উঠোনের মত খালি জায়গা। লবণাক্ত পানি শোধনের জন্য একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও আছে এ ভবনে। স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প খরচে সেটা বানানো হয়েছে।

ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল সাতক্ষীরার সহকারী ব্যবস্থাপক অসীম ক্রিস্টোফার রোজারিও সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তাদের এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হয়। রয়েছে তিনটি অপারেশন থিয়েটার, নারী-পুরুষের ওয়ার্ড, একটি লেবার ওটি। নিউনেটাল কেয়ার ইউনিটে ইনকিউবেটর সুবিধাসহ নবজাতকদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen + sixteen =

Back to top button