Lead Newsপ্রকৃতি ও জলবায়ূ

তিন বছরে সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে আটটি

আন্তর্জাতিকভাবে ২৯ জুলাই পালিত হলো বিশ্ব বাঘ দিবস। বাংলাদেশ ও ভারতসহ বাঘের বসবাস রয়েছে এমন দেশগুলোতে বাঘের বংশবৃদ্ধির অঙ্গীকারের মধ্যদিয়ে দিবসটি পালিত হয়েছে। বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে গত ৩ বছরে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে হয়েছে বর্তমানে ১১৪টি। অর্থাৎ ৩ বছরে সুন্দরবনের বাঘ বেড়েছে ৮টি।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ২২ মে সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ রয়েছে বলে ক্যামেরা ট্র্যাকিং জরিপে উঠে এসেছে। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ৩ বছরে বাঘের এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানায় বন বিভাগ। তবে ৩ বছরে মাত্র ৮ বাঘ বাড়াকে সংখ্যায় খুব একটা বেশি নয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। বন বিভাগ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমিকে তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করতে পারেনি। সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ করা গেলে দ্রুত বাঘের সংখ্যা বাড়বে। বর্তমানে সুন্দরবনে ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে।
সুন্দরবন বিভাগের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে রবার্ট হেনড্রেকিসের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি এরপর ১৯৮২ সালে মার্গারেট স্যালটার জরিপে ৪২৫টি ও এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়।
১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানায়। ২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি।
১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়। ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদশে অংশে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে দাঁড়ায় ১০৬টিতে। হঠাৎ করে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০টি থেকে ১০৬টিতে এসে দাঁড়ালে সারা বিশ্বে হৈ চৈ পড়ে যায়। চলতি বছরের ২২ মে সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৪ টিতে।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে মাত্র ১০টি। ১৪টি বাঘ পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা, একটি নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে ও বাকি ২৫টি বাঘ হত্যা করেছে চোরা শিকারিরা।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা সর্বশেষ জরিপে বেড়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × four =

Back to top button