ব্রিকস সম্মেলনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন তথা পশ্চিমা দুনিয়ার প্রভাব বলয়ের বাইরে গড়ে ওঠা ৫ জাতি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক জোট ব্রিকস-এর শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২২শে আগস্ট থেকে জোহানেসবার্গে শুরু হতে যাওয়া ৩ দিনের ওই সম্মেলনে ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে অংশ নিতে আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ। সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকার ৫৩ রাষ্ট্রসহ মোট ৭০টি রাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সম্মেলনের আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিবেন। এরইমধ্যে সরকার প্রধানের সফর প্রস্তুতি শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে মতবিরোধের মধ্যে শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সেখানকার ওপেন ফোরামে জোট বর্ধিতকরণ নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। যেহেতু ভারত এবং ব্রাজিল নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তির বিরোধী তাই এ নিয়ে ৫ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মধ্যে সমঝোতা না হলে বাংলাদেশসহ যোগদানের আগ্রহী সব রাষ্ট্রকেই অপেক্ষায় থাকতে হবে। কর্মকর্তারা বলেন, ব্রিকসে বাংলাদেশের যোগদানে বিলম্ব হলেও আপত্তি নেই। ব্রিকসকে বোঝাপড়া এবং সম্মেলনকে সম্পর্ক বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছে ঢাকা।
সম্মেলনের সাইড লাইনে চীন ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের চেষ্টা চলছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, বহুদিন ধরে ব্রিকসে যোগদানের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এজন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদনও করেছে ঢাকা। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় এবারের ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে জোটের প্রতিষ্ঠাতা ৫ সদস্যের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন এটা নিশ্চিত। তবে ব্যতিক্রম হবে রাশিয়ার ক্ষেত্রে। আইসিসি’র নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সশরীরে আফ্রিকা যেতে পারছেন না। তিনি ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিবেন। তবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অংশ নিচ্ছেন বলে তথ্য পেয়েছে ঢাকা। ২০০৬ সালে ব্রিকসের যাত্রা শুরু হয়। বেশ কিছুদিন ধরেই ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এ নিয়ে একাধিকবার কথা বলেছেন। বাসসের খবরে বলা হয়, গত ১৪ই জুন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ শিগগিরই ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে পারে। জেনেভায় প্যালেস ডি নেশনসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠককক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মধ্যে বৈঠকে বিষয়টি (ব্রিকসের সদস্যপদ) উত্থাপিত হয়েছে। কেবল বাংলাদেশ নয়, সবমিলিয়ে ২০টি দেশ ব্রিকস জোটে যোগ দেয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
এরমধ্যে বেশকিছু দেশ আনুষ্ঠানিকভাবেই আবেদন জানিয়ে রেখেছে। গত এপ্রিলে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পানডোর জানিয়েছিলেন, মোট ১২টি দেশ তখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক আবেদন জানিয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে আলজেরিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইরান, মিসর, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, নাইজেরিয়া ইত্যাদি। ২০টি দেশ সদস্য হতে চাইলেও আলজেরিয়া ও সৌদি আরবের আগ্রহই আন্তর্জাতিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। এই দুই দেশ তেল উৎপাদন করে। ধারণা করা হচ্ছে, তেলের উৎপাদন ও দর নির্ধারণে ব্রিকসের মধ্যে থেকে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চেষ্টা করবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক আবেদন পাওয়াসহ নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কথা বলেছেন। বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তির পক্ষ থেকে ব্রিকসে যোগ দিতে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং সম্প্রতি বলেছেন, বিকাশমান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্রিকস বহুপক্ষীয়তা সমুন্নত রাখা, বৈশ্বিক শৃঙ্খলের সংস্কারকে গতিশীল করা এবং উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধিত্ব ও বক্তব্য তুলে ধরতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
চীন ব্রিকসের সম্প্রসারণকে এগিয়ে নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং ব্রিকসের বড় পরিবারে আরও সমমনা অংশীদারদের যুক্ত করতে প্রস্তুত রয়েছে। মাও নিং এ সময় আরও বলেছেন, ব্রিকসের সম্প্রসারণের বিষয়ে জোটের পাঁচ সদস্য একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছেছে। আর বাংলাদেশকে ব্রিকস জোটে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত চীন। কেন ব্রিকসে যোগ দেবে বাংলাদেশ, সেটা খোলাসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এককভাবে কারও ওপর যেন নির্ভরশীল থাকতে না হয়, সেজন্যই ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি।