কর্পোরেট

ভারতে ইলিশ রপ্তানিঃ নতুন শর্তে আশাভঙ্গের আশঙ্কায় কোলকাতা

দুর্গাপূজা সামনে রেখে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভারতীয় মিডিয়া, বিশেষ করে কলকাতার গণমাধ্যমগুলো।

আনন্দবাজার পত্রিকা তো ঢাকাকে সরাসরি ‘কল্পতরু’র সঙ্গে তুলনা করেছে। আদি সংস্কৃত সাহিত্য অনুসারে, কল্পতরু হলো ইচ্ছাপূরণকারী ঐশ্বরিক একটি গাছ। অর্থাৎ ওপার বাংলার লোকদের ইলিশ খাওয়ার ইচ্ছা পূরণ করায় বাংলাদেশ সরকারকে সেই পৌরাণিক গাছের সঙ্গে তুলনা করেছে পত্রিকাটি।

কিন্তু ইলিশ রপ্তানিতে ঢাকার দেওয়া নতুন শর্তে হঠাৎই আশাভঙ্গের শঙ্কা দেখা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের লোকদের মনে। আনন্দবাজার বলছে, “বাংলাদেশ গত বছরের চেয়ে বেশি ইলিশ পাঠানোর আশ্বাস দিলেও তা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।”

গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) ২ হাজার ৮০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেশী দেশটিতে আরও ২ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দুই দফায় ভারতে মোট ৪ হাজার ৬০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত বেঁধে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, রপ্তানি নীতি ২০১৮-২০২১ এর বিধি-বিধান অনুসরণ করতে হবে; শুল্ক কর্তৃপক্ষ দ্বারা রপ্তানিকৃত পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করাতে হবে; প্রতিটি কনসাইনমেন্ট শেষে রপ্তানি সংক্রান্ত কাগজপত্র রপ্তানি-২ অধিশাখায় দাখিল করতে হবে; অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি রপ্তানি করা যাবে না।

অবশ্য এসব শর্ত নয়, ভারতীয়দের জন্য ঝামেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে রপ্তানি অনুমতির সময়সীমা। সোমবারের আদেশে অনুমতির মেয়াদ ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বলা হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবারের আদেশে তা কমিয়ে ৩ অক্টোবর বলা হয়েছে। ৪ অক্টোবর থেকে দেশে শুরু হচ্ছে টানা ২২ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা।

আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ থেকে আগামী ৩ অক্টোবরের মধ্যে সাড়ে চার হাজার টনের বেশি ইলিশ রপ্তানির শর্তে ওপার বাংলার বাঙালিদের আশা হাওয়ায় মেলাতে বসেছে। এত কম সময়ে এত ইলিশ আমদানি বা রপ্তানি কার্যত অসম্ভব বলে মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা।”

এই পরিস্থিতিতে র‌াজ্যটির মৎস্য আমদানিকারক সমিতির সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনার মোহম্মদ ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার আবেদন, আপাতত ৩ অক্টোবর পর্যন্ত যা ইলিশ ঢোকার ঢুকুক। কিন্তু ২২ অক্টোবরের পরে ধাপে ধাপে বাকি ইলিশও ঢুকতে দেওয়া হোক।

আনোয়ার আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেছেন, “ইলিশের বর্তমান বাজার ও পরিকাঠামোর ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক গড়ে ৫০ মেট্রিক টন পদ্মার ইলিশ ঢুকতে পারে। ফলে ৩ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকার দেওয়া সামান্য ইলিশই ঢুকতে পারবে!”

অবশ্য রপ্তানি অনুমতি দেওয়ার পর গত বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ৭৮ হাজার ৮৪০ কেজি (৭৮ টন ৮৪০ কেজি) ইলিশ ভারতে গেছে। বৃহস্পতিবার আরও ৪০ টন পৌঁছেছে বলে দাবি করেছে কলকাতার সংবাদমাধ্যমটি। তবে বাংলাদেশি গণমাধ্যমের খবর বলছে, এদিন ৫০টি ট্রাকে করে ২০৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে গেছে। সেই হিসাবে, গত দুদিনে ২৮৭ টনের বেশি ইলিশ পেয়েছে দেশটি।

তবে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীদের বক্তব্য অনুসারে সত্যিই যদি দৈনিক গড়ে ৫০ টন করে ইলিশ ভারতে যায়, তাহলে আগামী ৩ অক্টোবরের মধ্যে বড়জোর ৬০০ থেকে ৭০০ টনের মতো রপ্তানি করা সম্ভব হবে, যা প্রতিশ্রুত সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টনের চেয়ে অনেক কম।

সীমান্তের দুই পাশেই বিপুল জনপ্রিয়তা থাকা ইলিশ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনীতির অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করার পর ২০১২ সালে ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ। সেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এখনো। তবে গত বছর দুর্গাপূজা সামনে রেখে ভারতে ১ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। আর এ বছর অনুমতি দেওয়া হয়েছে তার চেয়েও প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি রপ্তানির।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen + 19 =

Back to top button