ভারতে করোনা আক্রান্তদের প্লাজমা দিচ্ছেন তাবলিগের সুস্থ সদস্যরা
ভারতে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের বাঁচাতে প্লাজমা দান করছেন দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের সুস্থ হয়ে ওঠা তিন শতাধিক সদস্য। তাদের শরীরে করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়া যে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে, যা দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব গুরুতর অসুস্থ কোভিড-১৯ রোগীকে।
সম্প্রতি দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাতের মারকাজে বিশেষ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেলেন কয়েক হাজার তাবলিগ সদস্য। সেখান থেকে বেশ কিছু মানুষ করোনা আক্রান্ত হওয়ায় দেশজুড়ে তাঁদের বিরুদ্ধে করোনা ছড়ানোর অপপ্রচার চালানো হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের টার্গেট করে গণমাধ্যমের একাংশ প্রচারণা চালায় যার ফলশ্রুতিতে সামাজিক পরিবেশে আঘাত আসে। অবশেষে করোনায় যেসব তাবলিগ সদস্য আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই সুস্থ হয়ে ওঠায় তাঁদের রক্ত থেকে প্লাজমা নিয়ে অন্য করোনা আক্রান্তের সুস্থ করার চেষ্টা চলছে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সম্প্রতি করোনা মুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে তাঁদের রক্তের প্লাজমা দান করার জন্য আহ্বান জানান। এরপরেই দিল্লির সুলতানপুরীতে অনেক জামাত সদস্য তাঁদের প্লাজমা দান করেন। এনডিটিভি সূত্রে প্রকাশ, তিনশ’র বেশি তাবলিগ সদস্য প্লাজমা দান করার জন্য দিল্লি সরকারের অনুমতিপত্রে সই করেছেন।
এ ব্যাপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক বিশিষ্ট সমাজকর্মী ড. সাইফুল্লাহ আজ (বুধবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে যে তাবলিগ জামাত সূত্রে করোনা ছড়িয়েছে এটাই একটা নির্জলা মিথ্যা। এটা গণমাধ্যমে জালিয়াতি, দুর্নীতি, অসততা যাই বলি না কেন, তার চূড়ান্ত নিদর্শন। এ পর্যন্ত কোনও পরিসংখ্যান এখনও কোনও সরকারি দফতর থেকে দেয়া হয়নি যে কতগুলো করোনা রোগী পাওয়া গেছে এবং তারমধ্যে কতজনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে তাবলিগ জামাতের যোগ আছে। যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের কার কার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাবলিগ জামাতের যোগ আছে এই তথ্য এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়নি এবং দিতে পারবে না তা আমরা নিশ্চিত করে জানি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাবলিগ জামাতকে সামনে রেখে যে অপপ্রচার করা হচ্ছে তার প্রেক্ষিতে একটা অত্যন্ত বাজে প্রতিক্রিয়া আমাদের দেশের জনমানসে সঞ্চারিত হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক বললেও কম বলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এটা একটা গণতান্ত্রিক দেশে সাংবিধানিক যে মূল্যবোধ তাকেই আঘাত করে। এই আঘাতের জায়গাটাকে কেউ কেউ বেশ উপভোগ করেছেন এবং তারমধ্যে একটা পৈচাশিক উল্লাস তারা অনুভব করেছেন! এর প্রেক্ষিতে আমাদের মনে হয় তাবলিগ এই যে সদস্যরা এখন প্লাজমা দিয়ে দেশের এবং দশের পাশে দাঁড়াতে চাচ্ছেন এটা তাঁদের দিক থেকে যেটা করণীয় তারা করছেন। কিন্তু এই করার মধ্যদিয়ে তাঁদের যে শুভ বার্তা দেওয়ার, যে সহানুভূতি, মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া, তার সেই অর্থে কোনও প্রচার হচ্ছে না। সেই লেভেলের প্রচার আসছে না। আসলে আমরা সবটাই একটা অন্যরকম ছকে চলছি। তবুও আমি বলব যে যারা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাঁদেরকে অত্যন্ত সাধুবাদ দিতে হয়। কিন্তু তারা যেন কখনোই এটা মনে না করেন যে তারা করোনা ছড়িয়েছিলেন এবং তার ড্যামেজ কন্ট্রোল হিসেবে এটা করছেন।’