ভিন্ন রকম এক রোনালদোকে দেখাল অ্যামাজনের তথ্যচিত্র
রোনালদো গোলের হিসাবে চ্যাম্পিয়নস লিগের সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়। সেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়ে যাওয়া সহজে হজম করবেন, সেটা কী সহজে ভাবা যায়!
হজম করতে পারেননি রোনালদোও। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের দেশের ক্লাব এফসি পোর্তোর বিপক্ষে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বাড়ির পথ ধরেছিল রোনালদোর সে সময়ের ক্লাব জুভেন্টাস। তখন দলটার কোচ ছিলেন আন্দ্রেয়া পিরলো। প্রথম লেগে এমনিতেই পোর্তোর মাঠ থেকে ২-১ গোলে হেরে এসেছিল জুভেন্টাস।
দ্বিতীয় লেগে ঘুরে দাঁড়াবে কি, প্রথমার্ধে নিজেদের মাঠে আরও এক গোল খেয়ে বসে তৎকালীন ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। নিজেদের গা ছাড়া অবস্থা দেখে বিরতির সময় সতীর্থদের ওপর মেজাজ হারিয়েছিলেন রোনালদো। আর রোনালদোর সেই মেজাজ হারানোই দেখা গেল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইমের নতুন তথ্যচিত্র ‘অল অর নাথিং: জুভেন্টাস’-এ।
বেশ কয়েক বছর ধরেই জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাবগুলোর অন্দরমহলের খবর নিয়ে চমকপ্রদ তথ্যচিত্র বানিয়ে যাচ্ছে অ্যামাজন প্রাইম। এর আগে ম্যানচেস্টার সিটি, টটেনহাম হটস্পার, ব্রাজিল জাতীয় দল নিয়ে তথ্যচিত্র বানিয়েছে তারা, এবার প্রকাশ করেছে জুভেন্টাস পর্ব। জুভেন্টাসের ২০২০-২১ মৌসুম নিয়ে বানানো এই তথ্যচিত্রে দলটার সাফল্যের তেমন কিছুই দেখা যায়নি।
কারণটা স্বাভাবিক, ওই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে বিদায় নেওয়ার পাশাপাশি জুভেন্টাস নয় বছর পর লিগ শিরোপাও হারিয়েছিল ইন্টার মিলানের কাছে। ফলে পুরো তথ্যচিত্রই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে তুরিনের বুড়িদের ব্যর্থতার খতিয়ান।
এর মধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগে বিদায়ের দিনের প্রামাণ্যচিত্রে দেখা গেল, সেদিন প্রথমার্ধ শেষে একরকম ঝড়ের বেগে নিজেদের ড্রেসিংরুমে ঢুকলেন রোনালদো। নিজের জায়গায় বসলেন। এর পরই শুরু করলেন কথার তুবড়ি ছোটানো। সতীর্থরা যেন উজ্জীবিত হয়ে পরের অর্ধে পোর্তোকে কয়েকটা গোল দিতে পারেন…রোনালদোর উদ্দেশ্য তেমনই ছিল। তাঁর পাশে বসে ছিলেন সুইডিশ ফরোয়ার্ড দেয়ান কুলুসেভস্কি।
নিজেদের খেলার ধরন যে মোটেও ভালো লাগেনি রোনালদোর, সেটাই বোঝা গেল প্রামাণ্যচিত্রে উঠে আসা ভিডিওতে তাঁর কথায়, ‘আমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এ কেমন কথা! আমরা খেলতেই পারছি না! একদমই না!’
রোনালদোকে শান্ত করতে তখন এগিয়ে আসেন জুভেন্টাসের কলম্বিয়ান উইংব্যাক হুয়ান কুয়াদ্রাদো, ‘চিন্তা করো না, ঠিক হয়ে যাবে।’ রোনালদো যেন তাতেও ঠান্ডা হলেন না, ‘আমরা জঘন্য খেলছি, পুরোটা সময়!’ কুয়াদ্রাদো যেন এরপর একটু বিরক্তই হলেন। রোনালদোকে বললেন, বকাবকির আগে তিনি নিজেও যেন সতীর্থদের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেন, ‘তুমি নিজে তাহলে সবার জন্য উদাহরণ তৈরি করো।’
তবে যোগ্য চ্যাম্পিয়নের মতো রোনালদোও নিজের ঘাটতি স্বীকার করেন। সম্মতি দেন কুয়াদ্রাদোর কথার সঙ্গে, ‘হ্যাঁ, কথাটা আমার জন্যও প্রযোজ্য। আমাদের সব সময় একে অন্যকে সত্যি কথাটা বলতে হবে। আমরা জঘন্য খেলেছি। এটা চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ। আমাদের জয়ের মানসিকতা দেখাতে হবে।’
রোনালদো-কুয়াদ্রাদোকে থামাতে এবার এগিয়ে আসেন খোদ কোচ আন্দ্রেয়া পিরলো, ‘ব্যস, অনেক হয়েছে ক্রিস (রোনালদো)। অনেক হয়েছে হুয়ান (কুয়াদ্রাদো)। আমাদের শান্ত থাকতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে। ঝগড়াঝাঁটি না করে আমাদের জিততে চাওয়া একটা দলের মতো খেলতে হবে।’ এরপর নিজেই শিষ্যদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়া শুরু করেন।
রোনালদোর মেজাজ হারানোতে সাময়িক লাভ হলেও শেষমেশ বাদই পড়তে হয় জুভেন্টাসকে। বিরতির পরই দুই গোল করে দলকে হারের হাত থেকে সাময়িকভাবে ফেরত আনেন ইতালিয়ান উইঙ্গার ফেদেরিকো কিয়েসা।
অতিরিক্ত সময়ে পর্তুগিজ মিডফিল্ডার সের্হিও অলিভিয়েরা অসাধারণ এক ফ্রি-কিক থেকে গোল করে আবারও ম্যাচের ভাগ্য টেনে দেন পোর্তোর দিকে। পরে জুভেন্টাসের মিডফিল্ডার আদ্রিয়াঁ রাবিও গোল করেও দলকে পরের রাউন্ডে ওঠাতে পারেননি। দুই লেগ মিলিয়ে ‘অ্যাওয়ে গোলে’র খড়্গে পড়ে বিদায় নেয় জুভেন্টাস। সতীর্থদের ওপর মেজাজ হারানো রোনালদো নিজে গোল করতে পারেননি।
ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে গিয়ে নিজেকে সামলাতে পারেননি রোনালদো। কেঁদেছিলেন। সেটাও দেখা গেছে এই তথ্যচিত্রে।