করোনাভাইরাসবিচিত্র

মদের দোকানে তালা, বিপাকে ভারতের সুরাপায়ীরা

দেশজুড়ে লকডাউনের কারণে বন্ধ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সব মদের দোকান৷ যার কারণে নিয়মিত মদ্যপায়ীরা পড়েছেন বিপাকে৷ এর মধ্যে ভাইরাল বার্তা আর গুজবে ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তিও৷

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ২১ দিনের লকডাউন চলছে ভারতে৷ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান ও বাজার খোলা৷ এছাড়া শুধু মিলছে জরুরি পরিষেবা৷ স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ রয়েছে মদের দোকান৷ এর ফলে বিপাকে পড়েছেন সুরা ভক্তরা৷ এরই মধ্যে রাজ্যে মদের কালোবাজারি ব্যাপক হারে বেড়েছে৷ চার-পাঁচ গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে নামী কোম্পানির মদ৷

জার্মানভিত্তিক বার্তা সংস্থা ডয়েচে ভেলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বাগুইআটির এক ক্রেতার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি পরিচিত ব্র্যান্ডের হুইস্কি যা ৫৪০ টাকায় বিক্রি হয়, তার জন্য এখন আড়াই হাজার টাকা দর উঠছে৷ শুধু কালোবাজারি নয়, এই সুযোগে জাল ও চোলাই মদেরও রমরমা বাড়ছে৷

এপ্রিল মাসের প্রথম দিন হঠাৎ গুজব রটে যায়, কয়েক ঘণ্টার জন্য মদের দোকান খোলা হচ্ছে৷ অনেক জায়গায় লাইন পড়ে যায় ক্রেতাদের৷ কিছুক্ষণ পরেই ভুল ভাঙে৷ বোঝা যায়, এপ্রিল ফুল করার জন্যই এই গুজব রটানো হয়েছিল৷

দ্বিতীয় ঘটনাটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ৷ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত কলকাতার কয়েকজন বাসিন্দা লকডাউনের সময় জরুরি পরিষেবা দেওয়ার জন্য একটি গ্রুপ তৈরি করেছিলেন৷ তারা যেমন প্রবীণদের ওষুধ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌছে দেওয়া থেকে শুরু করে নিজের গাড়িতে রোগীকে পৌঁছে দিচ্ছিলেন হাসপাতালে৷ কিন্তু, শুধু মদের আর্জি জানিয়ে অজস্র ফোন আসায় কেউ কেউ নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন৷ তাদের একজন সৌরভ চক্রবর্তীর মোবাইলে মদের হোম ডেলিভারির আর্জি জানিয়ে হাজার হাজার ফোন আসছে৷ আসছে অন্যান্য নেশার সামগ্রীর আবদার৷ এর মধ্যেই অনেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এই গোষ্ঠীর সদস্য আইনজীবী অনন্যা দাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমার কাছে গুটখা চেয়ে ফোন এসেছে৷ কিন্তু, এটা কি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মধ্যে পড়ে? তবু আমরা চেষ্টা করছি জরুরি পরিষেবা দিতে৷’

মদ্যপায়ীদের তরফ থেকে কয়েকদিন ধরেই এই দাবিটি উঠে আসছে যে, নেশার সামগ্রী হোম ডেলিভারি করা হোক৷ এ নিয়ে বুধবার বিকেল থেকে ব্যাপক বিভ্রান্তি ছড়ায়৷ বিভিন্ন অনলাইন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, মদের হোম ডেলিভারি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে৷ দোকানে ফোন করে অর্ডার দেওয়া যাবে৷ কাউকে দোকানে সশরীরে আসতে হবে না৷ দোকানের ডেলিভারি বয় তা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বাড়িতে পৌঁছে দেবেন৷ এই খবর বিদ্যুতের গতিতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, বার্তা ভাইরাল হয়ে যায়৷ যদিও এই বার্তা কে দিচ্ছে, তার হদিস মেলেনি৷ দ্রুত টনক নড়ে প্রশাসনের৷ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জানা যায়, এই ধরনের কোনো নির্দেশ রাজ্যের আবগারি দপ্তর জারি করেনি৷ বস্তুত এক্ষেত্রে আইনগত বাধা রয়েছে৷

যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাদের মতে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য না হওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সরকার মিষ্টির দোকান দিনে চার ঘণ্টার জন্য খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে৷ তবে মদের দোকানের ক্ষেত্রে তা হবে না কেন? এই দোকানগুলি বন্ধ থাকায় রাজস্বের অনেক ক্ষতি হচ্ছে ঠিকই৷ কিন্তু বিশৃঙ্খলা এড়াতে এ ধরনের কোনো অনুমতি সরকার দিচ্ছে না বলে মূখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে৷

এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সুরার ভক্ত দাবি করে সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সুর ও সুরা, দুটিই আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ মদ্যপান করে লেখার পরে আমি দেখেছি, এমন শব্দচয়ন করেছি, যা নিজে লিখেছি ভেবে পরে বিস্মিত হয়েছি৷ এই ঘটনা ঘটেছে পৃথিবীর অন্য শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের ক্ষেত্রেও৷ কিন্তু, এখনকার পরিস্থিতি মেনে নিতেই হবে৷ আগে প্রাণ বাঁচুক, পরে প্রাণনের কথা ভাবা যাবে৷’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =

Back to top button