Lead Newsস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

মাইন্ড এইড হাসপাতাল থেকে ১৬ মাসে ১০ লাখ টাকা কমিশন নিয়েছেন মামুন

রাজধানীর মাইন্ড এইড হাসপাতাল থেকে ১৬ মাসে ১০ লাখ টাকা কমিশন নিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে থাকা আবদুল্লাহ আল মামুন এ তথ্য জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তাদের।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এনটিভি অনলাইনকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

এ ছাড়া পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। সেখানে পুলিশ দাবি করে বলছে, মাইন্ড এইডে রোগী পাঠিয়ে ১৬ মাসে ১০ লাখের বেশি টাকা কমিশন হাতিয়েছেন ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। শুধু তাই নয়, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একজন উপপরিচালক ও কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের এক আবাসিক চিকিৎসকের রোগী ভাগানোতে জড়িত থাকার তথ্যসহ আরো বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন মামুন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাত দিনের রিমান্ড শেষে মাইন্ড এইডের চার কর্মচারীকে বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়া আরো ছয় কর্মচারীকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তারের পর ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওই দিন রাতে ও বুধবার সকালে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

ডা. মামুনের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তার লোক সেট করা আছে। সচ্ছল রোগী দেখলেই তারা রোগীর স্বজনদের বলেন, এখানকার চিকিৎসা ভালো নয়, এখানে চিকিৎসা নিলে রোগী আরো অসুস্থ হবেন। এসব বলে তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন এই বলে যে, তিনি (ডা. মামুন) সহযোগিতা করতে পারবেন। এসব কথা বলে রোগীকে আমার কাছে পাঠানো হতো। এরপর আমি রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে মাইন্ড এইডে ফোন করতাম। বলতাম একজন রোগী পাঠাচ্ছি, খুব দ্রুত ভর্তি করে নাও। কখনো কখনো সরকারি অ্যাম্বুলেন্সেও পাঠিয়ে দিতাম।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে ডা. মামুন জানান, মাইন্ড এইডে পাঠালেই ৩০ পারসেন্ট কমিশন পেতেন তিনি। প্রতি রোগী থেকে তাঁর  কমিশন আসত ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া মাইন্ড এইডে রোগীও দেখতেন মামুন। সেখান থেকেও আলাদা টাকা পেতেন। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি শুধু মাইন্ড এইডে ২৫ জনের বেশি রোগী পাঠিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ডা. মামুন মাইন্ড এইড হাসপাতাল ছাড়াও আদাবরের মাইন্ড ওয়েল হাসপাতালেও রোগী পাঠাতেন। টাঙ্গাইলে ঢাকা ক্লিনিক নামের একটি হাসপাতালে রোগী দেখতেন তিনি। এ ছাড়া টাঙ্গাইল ও আশপাশের কোনো রোগী ঢাকায় চিকিৎসা নিতে এলে তাকে কৌশলে সেখানে পাঠিয়ে দিতেন। তবে এসব বিষয়কে দোষ হিসেবে দেখছেন না ডা. মামুন।

ডা. মামুন জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, ‘আমি তো একা নই। সরকারি হাসপাতালের অনেক ডাক্তারই তো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রোগী পাঠান।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় মানসিক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. তারিক সুমন, কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের আবাসিক সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. মো. রাহেনুল ইসলাম, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ যোবায়ের মিয়াসহ আরো কয়েকজন মাইন্ড এইডে রোগী পাঠাতেন। তারাও প্রতি রোগীতে মোটা অঙ্কের কমিশন পেতেন। যে কারণে মাইন্ড এইডে রোগীর সংকট থাকত না।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘যেসব ডাক্তারের নাম এসেছে, সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ডা. মামুন যে মাইন্ড এইডের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়কে ফোন করে সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমকে মাইন্ড এইডে পাঠিয়েছেন, এর কল রেকর্ড আমাদের হাতে আছে।’

মাইন্ড এইডে এএসপি আনিসুল করিম মারা গেছেন জেনেও ডা. মামুন নিজের দায়ভার এড়াতে সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে তাঁকে  জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমকে মারধরের ভিডিও ফুটেজে সাদা অ্যাপ্রোন পরা যে নারীকে পালস পরীক্ষা করতে দেখা গেছে তাঁর নাম ডা. জ্যোতি। তিনি মঠবাড়িয়ার একটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। এক মাস আগে মাইন্ড এইডের পরিচালক ডা. নিয়াজ মোর্শেদের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর নিয়াজ মোর্শেদ তাঁকে মৌখিকভাবে মাইন্ড এইডের পরিচালকের দায়িত্ব দেন।

এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত নিয়াজ মোর্শেদ অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তা ছাড়া আরেক পরিচালক ফাতেমা খাতুন ময়নাকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনিও মাইন্ড এইডে রোগীদের নির্যাতনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 1 =

Back to top button