আন্তর্জাতিক

মায়ের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হলো ফ্লয়েডকে

হিউস্টনের চার্চ থেকে ফ্লয়েডের নিথর দেহ নিয়ে যখন শেষ যাত্রা শুরু হলো, তখন পুলিশ কর্মীরা তাঁকে স্যালুট করলেন দুই সারিতে বিভক্ত হয়ে। দুই সপ্তাহ আগে বর্ণবিদ্বেষী পুলিশের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে জর্জ ফ্লয়েডকে। তারপর গত দুই সপ্তাহে অ্যামেরিকা তো বটেই বিশ্ব জুড়ে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়েছে ফ্লয়েডকে সামনে রেখে।

তাঁর মায়ের পাশেই সমাহিত করা হলো ফ্লয়েডকে। চার্চ থেকে সমাধিস্থল পর্যন্ত রাস্তায় ছিলেন অসংখ্য মানুষ। তাঁরা ঘণ্টা খানেক আগে থেকে দাঁড়িয়েছিলেন সেখানে। এই হিউস্টনেই বেড়ে উঠেছিলেন ফ্লয়েড। সেই হিউস্টনই চোখের জলে বিদায় জানাল তাঁকে। সেই সঙ্গে শপথ নিলো অন্যায়, অবিচার ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের।

দাবি উঠেছে পুলিশি ব্যবস্থা সংস্কারের। সেই ফ্লয়েডের দেহ নিয়ে কফিন যখন বেরচ্ছিল চার্চ থেকে, তখনই তিনি পুলিশের স্যালুট পেলেন। কিন্তু এখন তিনি সত্যিই শ্বাস নিতে পারছেন না, তবে ভবিষ্যতে যাতে বর্ণবাদীরা আর কারও শ্বাসরোধ করতে না পারে, সেই কাজটাও শুরু হয়েছে তাঁকে সামনে রেখেই।

শুধু হিউস্টন নয়, গোটা অ্যামেরিকা ছিল শোকস্তব্ধ। তাঁর শেষকৃত্যের ছবি পুরো অ্যামেরিকায় লাইভ দেখানো হয়েছে। শেষ যাত্রা শুরু হতেই নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ নীরব হয়ে যায় আট মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের জন্য। বর্ণবাদী পুলিশ অফিসার  ফ্লয়েডের গলায় আট মিনিট ৪৬ সেকেন্ড ধরে তার হাঁটু চেপে রেখেছিল। ২২৮ বছরের ইতিহাসে এত দীর্ঘ সময় ধরে কখনও নীরব থাকেনি নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ।

ডেমোক্র্যাট নেতা এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য প্রার্থী জো বাইডেন সোমবার দেখা করে গিয়েছিলেন ফ্লয়েডের পরিবারের সঙ্গে। মঙ্গলবার তিনি একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ”যখন জর্জ ফ্লয়েড ন্যায়বিচার পাবেন, তখন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অ্যামেরিকাও ন্যায় পাবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কৃষ্ণাঙ্গ বাচ্চারা একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছে, আমার বাবাকে কেন চলে যেতে হলো? তখন সেই প্রশ্ন আর তাঁদের জিজ্ঞাসা করতে হবে না।”

হিউস্টনের মেয়র সিলভেস্টর টার্নার ঘোষণা করেছেন, তিনি একটি প্রশাসনিক নির্দেশে সই করেছেন। এতে বলা হয়েছে, পুলিশ দমবন্ধ করে কাউকে মারতে পারবে না বা শাস্তি দিতে পারবে না। আর গুলি চালানোর আগে পুলিশকে প্রথমে সতর্ক করে দিতে হবে। মেয়র নিজেও কৃষ্ণাঙ্গ। তিনি বলেছেন, ”আমরা তাঁর শ্বাস নিয়ে নিয়েছি। এখন আমরা যাতে নিঃশ্বাস নিতে পারি, সেই ব্যবস্থটুকু অন্তত করতে হবে।”

আর শেষ যাত্রার আগে ফ্লয়েডের পরিবারের লোক, বন্ধুরা তাঁকে স্মরণ করেছেন। সেখানে একবারের জন্যও ট্রাম্পের নাম নেওয়া হয়নি। তবে বলা হয়েছে, এরপর যিনি অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন, তাঁকে বর্ণবাদ শেষ করার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে। অ্যামেরিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। এখন সেই পরিবর্তন আনার সময়।

জর্জ ফ্লয়েড আর সশরীরে নেই। তিনি থেকে গেলেন লোকের হৃদয়ে। থেকে গেলেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × four =

Back to top button