কোনো বিবাহিত নারী যদি বয়স্ক শ্বশুর-শাশুড়িকে ছেড়ে আলাদা থাকার জন্য স্বামীকে চাপ দেন, তাহলে সে কারণে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে পারবেন ওই ব্যক্তি। একটি মামলার শুনানিতে গতকাল রোববার এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের কেরালা রাজ্যের হাইকোর্ট।
আদালতে বিচারপতি এ এম শফিক ও মেরি জোসেফের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানায়, বৃদ্ধ মা-বাবার অসহায়ত্ব আর স্ত্রীর প্রত্যাশা—এ দুই মিলে যে টানাপোড়েন, তা কোনো সন্তানের পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব। এ ধরনের কোনো ঘটনায় যদি দেখা যায়, স্ত্রীর আলাদা হতে চাওয়ার দাবির পেছনে কোনো বড় কারণ বা তেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই, তাহলে ইচ্ছে করলে ওই নারীর স্বামী ডিভোর্স দিতে পারবেন স্ত্রীকে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল এ খবর জানিয়েছে।
কয়েক দিন আগে এক ব্যক্তি কেরালা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তিনি মামলায় আবেদন করেছিলেন, তাঁর স্ত্রী শাশুড়িকে ছেড়ে একটি আলাদা বাড়ি ও সংসার করে থাকতে চাইছেন। এ জন্য ওই নারী হুমকিও দিয়েছেন যে তিনি আত্মহত্যা করে শাশুড়িকে দায়ী করে যাবেন। এর ফলে স্ত্রীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান ওই ব্যক্তি।
এদিকে, ওই মামলার শুনানিতে ওই ব্যক্তির স্ত্রী আদালতে পাল্টা জানান, স্বামী মদ খেয়ে মারধর করেন তাঁকে। দুর্ব্যবহার করেন নিয়মিত। আর এসবই হচ্ছে শাশুড়ির ইন্ধনে। তাই তিনি শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যেতেও বাধ্য হয়েছেন। এরপরও তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকতে চান, তবে মায়ের সঙ্গে থাকতে পারবেন না স্বামী।
আদালত দুপক্ষের বক্তব্য শুনে জানান, আবেদনকারীর স্ত্রী যা জানিয়েছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে, তিনি শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে চান না। তাঁদের মধ্যে যে মাঝেমধ্যেই ঝামেলা হতো, সেটাও স্পষ্ট। তাই বিবাহিত জীবনে তিনি শাশুড়িকে চাইছেন না। কিন্তু এর মাঝে ফেঁসে গেছেন তাঁর স্বামী। ফলে স্বামীকে বারবার চাপ দিয়ে মাকে ছাড়তে বলাটা তাঁর ওপর মানসিক নির্যাতন।
এমনকি আদালত এও বলেন, হয়তো এ অসহ্য মানসিক চাপেই মদ্যপ হয়ে পড়েছেন আবেদনকারী স্বামী। সেইসঙ্গে আদালতের বক্তব্য, সমস্যা সব পরিবারেই হয়। কিন্তু তাই বলে এভাবে পরিবার ভাগ করে, বৃদ্ধ শাশুড়িকে আলাদা করে স্বামীকে নিয়ে আলাদা বাড়িতে চলে যাওয়ার দাবি করা ঠিক নয়। ২০১৬ সালের ভারতীয় হিন্দু বিবাহ আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটিকে দণ্ডনীয় অপরাধও বলা চলে।
এরপরই আদালত রায় দেন, সব তথ্য-প্রমাণ বিচার করে আদালত মনে করছেন যে আবেদনকারী পুরুষটির প্রতি তাঁর স্ত্রী নির্মম আচরণ করেছেন। আর সে আচরণের জন্য ওই পুরুষ তাঁর স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে পারেন।