মিতু হত্যা: দুই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে পিবিআই
তদন্তভার পাওয়ার সাত মাস পর তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), যারা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যা মামলার জট খুলতে দুটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে।
আদালত পিবিআইর আবেদনে সাড়া দিয়ে এক আসামিকে একদিনের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দিয়েছে, বাকি দুই আসামিকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে।
এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডে ‘অংশগ্রহণকারী’ মো. শাহজাহান মিয়াকে এক দিনের জন্য হেফাজতে নিতে পারবে পিবিআই। কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে মিতুকে ‘গুলিবর্ষণকারী’ মোতালেব মিয়া ওয়াসিম এবং মিতুকে ‘অনুসরণকারী’ আনোয়ারকে।
রোববার চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আলোচিত মামলাটির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পিবিআইর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের অতিরিক্ত সুপার মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, আসামিরা আগে যেসব তথ্য দিয়েছেন, তা যাচাই করতেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিন বলেন, “আমরা মূলত দুটি তথ্য জানতে চাই।
“প্রথম কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা কেন প্রধান পরিকল্পনাকারী হল? এখানে তার স্বার্থ কী? এ ঘটনায় কারও ইন্ধন আছে কি না? মুছার নেপথ্যে কে?
“আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো- বাবুল আক্তারের শ্বশুর শুরুতে মেয়ে জামাইকে মহান দাবি করলেও এখন তাকেই কেন অভিযুক্ত করছেন?”
এ দুটি বিষয় ‘মাথায় রেখেই’ তারা তদন্ত এগিয়ে নিতে চান বলে জানান আইও মাঈন উদ্দিন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন চট্টগ্রামে বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী নাহিদা আক্তার মিতু।
পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিয়ে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল। তার আগে তিনি চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পর ব্যাপক আলোচনার মধ্যে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন বাবুল আক্তার নিজেই।
এরপর ওই বছরের ২৪ জুন ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরের বাসা থেকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেয়।
দুই দিন পর ওই বছরের ২৬ জুন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সেসময়ের কমিশনার ইকবাল বাহার সংবাদ সম্মেলন করে মিতু হত্যায় ‘সরাসরি জড়িত’ মোতালেব মিয়া ওয়াসিম এবং আনোয়ারকে গ্রেপ্তারের খবর দেন।
সেদিন সিএমপি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার জানিয়েছিলেন, বাবুলের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডে সাত থেকে আটজন জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে দুজন হলেন ওয়াসিম ও আনোয়ার।
হত্যাকাণ্ডের পর মোটর সাইকেলে যে তিনজনকে পালাতে দেখা গিয়েছিল, ওয়াসিম তাদের একজন এবং আনোয়ার অনুসরণকারীদের একজন বলে দাবি করেছিলেন পুলিশ কমিশনার।
ওয়াসিম ও আনোয়ার ২৬ জুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছার ‘পরিকল্পনাতেই’ এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
জবানবন্দিতে ওয়াসিম বলেন, নবী, কালু, মুছা ও তিনি ‘সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন’ এবং নবী ও কালু মিতুকে ‘ছুরিকাঘাত করে’। আর শাহাজাহান ঘটনাস্থলের অদূরে একটি হোটেলের নিচে অবস্থান নিয়ে পর্যবেক্ষণে ছিলেন।
এরপর ১ জুলাই কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার ভাই সাইফুল ইসলাম শিকদার সাকু ও শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায় সাকু।
২০১৬ সালের ২৮ জুন পুলিশ বাকলিয়া এলাকা থেকে ‘হত্যকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারী’ ভোলা ও তার সহযোগী মনিরকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা পিস্তলটি মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার হয় বলে তখন পুলিশ দাবি করেছিল।
এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ভোলা ও মনিরকে আসামি করে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দেওয়ার পাশাপাশি ভোলাকে মিতু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া এহতেশামুল হক ভোলাও গত বছরের ডিসেম্বরে জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন।
এদিকে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন ছয়জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং দুজন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
তবে জবানবন্দিতে আসা ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ও কালুর খোঁজ পুলিশ চার বছরেও ‘পায়নি’।
হত্যাকাণ্ডের ১৭ দিনের মাথায় মুছাকে বন্দর থানা এলাকায় এক আত্মীয়র বাসা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় বলে মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার তখন দাবি করেছিলেন। তবে পুলিশ তা স্বীকার করেনি।
শুরু থেকে গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটির তদন্ত করছিল। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে পারেনি। এরপর গত জানুয়ারিতে আদালত মামলাটি তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়।
এরপর করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তদন্ত কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছিল না বলে দাবি করেছিলেন পিবিআই কর্মকর্তারা। বিডি নিউজ