ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সারাবিশ্বে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিতি বলে দাবি করেছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, আমরা দেশের অধিকাংশ মানুষের সেন্টিমেন্টের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণ বাতিলের আহ্বান জানাই।
সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় হেফাজত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমন এবং সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও হেফাজতে ইসলামের ওপর মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে শীর্ষক সংবাদ সম্মলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।
লিখিত বক্তব্যে জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, মুসলমান হিসেবে ঈমানী দায়িত্ব ও দেশপ্রেমের দায়বোধ থেকেই নরেন্দ্র মোদির আগমণের বিরুদ্ধে আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।
হেফাজতের কি ধরনের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে জানতে চাইলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আমরা এখন কোনও কর্মসূচি ঘোষণা করছি না। আপতত এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে আমাদের বক্তব্য দেয়া অব্যাহত থাকবে।
নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণ বাতিলের জন্য সরকারকে সরাসরি জানানো হবে কিনা জানতে চাইলে মামুনুল হক বলেন, আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে এই দাবি জানিয়েছি। এর বাইরে সরাসরি সরকারের কাছে কোনও দাবি তুলে ধরা হবে না।
মামুনুল হক আরও বলেন, ‘আমাদের সাংবাদিক সম্মেলন দেশে রাষ্ট্রীয় একজন আমন্ত্রিত অতিথিকে নিন্দা জানানোর জন্য। হেফাজতে ইসলাম কোনও উগ্রবাদী সংগঠন নয়, শান্তিপূর্ণ সংগঠন।
নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ জানানোই আমাদের কাজ। এখানে রাজপথে মিছিল অথবা সংঘাতমূলক কোনও কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে না।
মোদির আগমণে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী মহিমান্বিত হবে না বরং কলঙ্কিত হবে বলে দাবি করে মামুনুল হক বলেন, যে কোন উপায়ে নরেন্দ্র মোদির কাছে সংবাদ পৌঁছাবে যে মানুষ তাকে চাচ্ছে না। কাজেই তারও যদি আত্মসম্মানবোধ থেকে থাকে তাহলে তিনিও বাংলাদেশে আসবে না।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী থাকায় আমরা কোনও কর্মসূচিতে যাচ্ছি না। তবে আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো অব্যাহত থাকবে।’
লিখিত বক্তব্যে জুনায়েদ আল হাবীব আরও বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপনে এমন কাউকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা উচিত হবে না, যাকে এদেশের মানুষ চায় না।
নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে তার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে গুজরাটে মুসলমানদের উপর পরিচালিত ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস ভুলে যাওয়ার মতো নয়। ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ধ্বংস এবং সেখানে অন্যায়ভাবে মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্তে আমাদের হৃদয়ে রক্তপাত হয়। এ ছাড়াও কাশ্মীরে নৃশংস মুসলিম নির্যাতন এবং নাগরিকত্ব আইনসহ প্রতিটি মুসলিম বিরোধী সিদ্ধান্তের মূল হোতা এই নরেন্দ্র মোদি। বছরখানেক আগে তার অনুসারীদের হাতে দিল্লিতে মুসলমানের রক্তের বন্যা বয়ে গেছে। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদের মিনার ভেঙে সেখানে হিন্দুত্ববাদী গেড়ুয়া পতাকা টানানো হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনার তালিকাও বেশ দীর্ঘ বলে উল্লেখ করে হেফাজতের ঢাকা মহানগরের সভাপতি বলেন, গঙ্গার পানি চুক্তি যে প্রত্যাশার পরিবেশ তৈরি করেছিলো, তার বাস্তবায়ন হয়নি।
তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি পেছাতে পেছাতে এখন তালিকা থেকেই বাদ পড়ে গেছে।
ভারতের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং নির্বাচন নিয়ে হেফাজত কথা বলতে ইচ্ছুক নয় বলে উল্লেখ করে জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, তারপরেও অবস্থাদৃষ্টে বলতে হয়, সচেতন পর্যবেক্ষকদের মতে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে পরিকল্পিত ছক অনুযায়ী সংখ্যালঘু নিপীড়নের নাটক সাজানো হচ্ছে।
এর দ্বারা মোদি ও তার সহযোগী উগ্র হিন্দুত্ববাদী কাপালিক গোষ্ঠী একদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনে ফায়দা হাসিল করতে চাইছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে হিন্দুস্তানের নীলনকশা বাস্তবায়নের কেন্দ্র বানাতে দিতে পারি না এবং আমরা কাউকে এমনটা করতে দিবো না।
সাম্প্রতি কুরআনের ২৬টি আয়াত বাতিল চেয়ে ভারতের কোর্টে রিট হয়েছে বলে উল্লেখ করে হেফাজতের এই নেতা আরও বলেন, এই রিটের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীর মুসলমানদের কলিজায় আঘাত করা হয়েছে। কুরআনের কোন আয়াত থাকবে আর কোন আয়াত থাকবে না এটা কি মোদি সরকার আর তাদের আদালত ঠিক করে দিবে? ভারতের এমন কর্মকান্ডে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের মানুষ চরম বিক্ষুব্ধ। সে কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর গুরুত্বপূর্ণ আয়েজনে মোদির মত একজন ব্যক্তি আসুক এটা আমরা চাই না।
তিনি আরও বলেন, ১৭ই মার্চ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনার যাচাই-বাছাই ছাড়াই এক শ্রেণির মিডিয়া তাৎক্ষণিক প্রচার করে ‘হেফাজতে ইসলাম যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ঝুমন দাসের ফেসবুকে কটূক্তির প্রতিবাদে এই হামলা হয়েছে। অথচ দুদিনের মাথায় স্পষ্ট হয় এই ঘটনার আমাদের দূরতম সম্পৃক্ততাও নেই।
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী বাসিন্দা অসীম চক্রবর্তী ও দীপক দাস জানান, হামলার মূল নেতৃত্বে ছিলেন দিরাই উপজেলার নাচনী গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ও একই গ্রামের পদ্ধতি মিয়া।
কিন্তু সংবাদপত্রের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অন্ধ বিদ্বেষে হেফাজতে এবং মামুনুল হককে জড়িয়ে তাদের অসত্য নিউজের ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত রেখেছে।