দেশবাংলা

গ্রামবাসীর অর্থায়নে ২৮০ ফুট দৈর্ঘের কংক্রিট সেতু

নদীর ৫ কিলোমিটারের দুইপ্রান্তে সেতু থাকলেও তার মধ্যবর্তী এলাকার বাসিন্দারা পড়েছিলেন বেকায়দায়। দীর্ঘদিন কলাগাছের ভেলা আর বাঁশের সাঁকোই ছিল নদী পারাপারে তাদের একমাত্র ভরসা।

সরকারি অর্থায়নে সেতু নির্মাণে কোন সহায়তা না পেয়ে স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রম আর নিজস্ব অর্থায়নে নদীটির ওপর নির্মিত হয় ২৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের একটি সেতু। বিরল এই দৃষ্টান্তটি স্থাপন করেছেন ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাটিপাড়া ও বইলর ইউনিয়নের বাঁশকুঁড়ি গ্রামের বাসিন্দারা।

ত্রিশাল উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে সুতিয়া নদী। সুতিয়ার দুই পাড়েই রয়েছে স্কুল, কলেজসহ বহু সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। নদী পারাপারে উপজেলা পরিষদ ও থানার মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে একটি সেতু। অপরদিকে সুতিয়ার উজানে ধানীখোলা ইউনিয়নের ধানীখোলা বাজারে প্রবেশপথে আছে আরেকটি সেতু।

ত্রিশাল উপজেলা সদর থেকে ধানীখোলা বাজারের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। এতে করে স্কুল, কলেজসহ সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তার মধ্যবর্তী এলাকার বইলর বাঁশকুড়ি, মুন্সিপাড়া, আংরার চর, চরপাড়া ও বকশিপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা পড়তেন চরম বেকায়দায়।

ওইসব এলাকার লোকজন স্কুল, কলেজসহ সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরসমূহে যেতে চাইলে তাদেরকে অতিরিক্ত ৬ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হতো। সময় ও খরচ বাঁচাতে দীর্ঘদিন কলাগাছের ভেলায় চড়ে নদী পার হতেন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। তারপর স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের পর কাঠের সাঁকো তৈরি করে তা ব্যবহার করা হয় দীর্ঘদিন। কিন্তু প্রতি বছরই তা সংস্কারের প্রয়োজন পড়ত। বছর বছর সাঁকো সংস্কারে দেখা দিত নানাবিধ সঙ্কট।

এরপর একটি দীর্ঘস্থায়ী কংক্রিটের সেতু নির্মাণের পরিকল্পনায় ঐক্যমত হন সুতিয়ার দু’পাড়ের মানুষ। সরকারি অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রম আর নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেন তারা। ধানীখোলা ও বইলর ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গসহ অন্যান্যদের সাহায্য সহযোগিতায় ওঠে ৬০ লাখ টাকা।

এই ৬০ লাখ টাকার মধ্যে ১৪ লাখ টাকা দিয়েছেন ইনফিনিটি, লুবনান ও রিচম্যানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হক খাঁন। মশিউর রহমান শাহানশাহও দিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা এবং উপজেলা প্রশাসন প্রায় দুই লাখ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এর বাইরেও অনেকে কাজ চলাকালীন সময়ে ইট, বালু, রড, সিমেন্টসহ সেন্টারিংয়ের বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

অনেক প্রতিকুল অবস্থা অতিক্রম করে অবশেষে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে  নদীটির ওপর নির্মিত হয় ২৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থের একটি সেতু।

এছাড়াও সেতুটি নির্মাণে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকার মত ভূমিকা যারা পালন করেছেন তাদের মধ্যে স্থানীয় নজরুল ইসলাম, চাঁন মিয়া, আবদুল মালেক, তাজুল ইসলাম, হারুন তালুকদার, আরিফ হোসেন সরকার, হাসিম তালুকদার, নয়ন তালুকদার ও মোহাম্মদ তালুকদারের নাম উল্লেখযোগ্য।

উদ্যোক্তারা জানান এখনো নুরী পাথর দিয়ে সেতুর ওপরের অংশে ঢালাই ও রঙের কাজ বাকি আছে। এতে ব্যয় হবে আনুমানিক ৪ লাখ টাকা।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে আংরার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা পাকা করা হয়েছে। আর মাত্র ৪৫০ মিটার পাকা করা হলে রাস্তাটি সেটি সেতু পর্যন্ত পূর্ণতা পাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × two =

Back to top button