বিচিত্র

‘রক্তের ধর্ম হয় না’, রোজা ভেঙে হিন্দু বৃদ্ধাকে বাঁচালেন মুসলিম নারী

পুরো বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ মহামারিতে বিপর্যস্ত তখন রোজা ভেঙে হিন্দু বৃদ্ধাকে রক্ত দিয়ে সম্প্রীতির নজির স্থাপন করলেন এক মুসলিম গৃহবধূ। ৬০ বছর বয়সী জোৎস্না রায়কে রক্ত দেওয়া ওই নারীর নাম রুম্পা খন্দকার।

চলমান লকডাউনে ভারতের নদিয়া জেলার রানাঘাটে এ ঘটনা ঘটেছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সম্প্রচার মাধ্যম জি নিউজ।

জানা গেছে, জোৎস্না রায় কয়েক মাস ধরে কিডনির রোগে আক্রান্ত। মাসে তিন বার জোৎস্নার ডায়ালাইসিস করতে হয়। দু’মাস আগে বাড়িতেই পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পান। ইদানিং জোৎস্নার শরীরের অবস্থা সংকটজনক হতে শুরু করে। রানাঘাটের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় তাকে।

নার্সিংহোমে ভর্তি করার পরই চিকিৎসকরা জানান, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জোৎস্না রায়কে রক্ত দিতে হবে। তার রক্তের গ্রুপ O পিজিটিভ। করোনার কারণে রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের সংকট। মায়ের রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় জোৎস্নার বিবাহিত মেয়ে বিশাখা পান্ডেকে। বিভিন্ন জায়গায় রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেও লকডাউনের সময় রক্ত জোগাড় করতে পারেননি বিশাখা।

এই অবস্থায় একটি সংগঠনের সন্ধান পান জোৎস্নার মেয়ে। রানাঘাটে এই সংগঠনটি তৈরি হয়েছে করোনা মোকাবিলার জন্য। এই সংগঠনের কাজ হচ্ছে করোনার সময় চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করা। কোনো জায়গায় রক্ত না পেয়ে ওই সংগঠনটির কাছে মায়ের রক্তের জন্য লিখিত আবেদন করেন বিশাখা।

ওই সংগঠনের একজন সদস্যা রুম্পা খন্দকার। তার বাড়ি রানাঘাট থানার কামারপাড়ায়। রক্তের জন্য মায়ের মতো এক বৃদ্ধার প্রাণ সংশয় জানতে পেরেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন রুম্পা। তার রক্তের গ্রুপের সঙ্গে জোৎস্না দেবীর রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়াতে তিনি নিজেই রক্ত দিতে সম্মত হন।

রানাঘাট হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই রক্ত দিতে দিতে এই মুসলিম গৃহবধূ বলেন , ‘রক্তের রং একটাই লাল। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে হিন্দু বা মুসলিম এই ভেদাভেদ করা উচিত নয়। রোজা আগামী বছরও করতে পারব।’

মায়ের প্রাণ বাঁচানোর পর রুম্পা খন্দকারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জোৎস্না রায়ের মেয়ে বিশাখা পান্ডে জানান, ‘রক্তের কোনো ধর্ম বা জাত হয় না। রুম্পা আজ সমাজের বুকে সেটা প্রমাণ করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এটা সব ধর্মের মানুষকে সঠিক দিশা দেখাবে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + 4 =

Back to top button