Breakingধর্ম ও জীবন

রমজান শেষে হলেও যে রহমত পেতে থাকে রোজাদার

রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস শেষ হতে চলেছে। আজ ২৯ রমজান। সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলেই পরদিন ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নেবে মুমিন মুসলমান রোজাদার। কিন্তু রমজান শেষ হলেও যে রহমত ও সৌভাগ্য শেষ হয় না। কী সেই রহমত ও সৌভাগ্য?

হ্যাঁ, রমজান শেষে শাওয়ালের প্রথম রাত তথা ঈদের রাত ও ঈদুল ফিতরও মুমিন মুসলমান রোজাদারের জন্য রহমত ও সৌভাগ্য পাওয়ার অন্যতম উপায়। কেননা শাওয়াল মাসের প্রথম রাত এবং ঈদুল ফিতরের নামাজ পর্যন্ত রোজাদারের জন্য অবিরত রহমত ও সৌভাগ্য নাজিল হতে থাকে।

রমজানের শেষ সময়ের রাত ও দিনগুলোর ফজিলত মর্যাদা ও সৌভাগ্য কম নয়। তাই ঈদের খুশি ও প্রস্তুতিতে শেষ তারাবিহ, তাহাজ্জুদ ও রমজানের রহমত বরকত আর অফুরন্ত সৌভাগ্যগুলো কোনোভাবেই হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।

যারা খতমে কুরআনের মাধ্যমে তারাবিহ আদায় করেছেন, এটা মহান তাদের জন্য মহান আল্লাহ অনুগ্রহ। আর যারা খতম তারাবিহ আদায় করতে পারেনি কিন্তু এমনিতে তারাবিহ, তাহাজ্জুদ পড়েছে এবং শেষ রাতে সাহরি খেয়েছে- তাদের জন্য এগুলোও বিশেষ অনুগ্রহ। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে পরদিন ঈদুল ফিতর আদায় করা পর্যন্ত এ রহমত ও সৌভাগ্য অব্যাহত থাকে।

এ ভুল যেন না হয়-
নামাজ ফরজ ইবাদত। পুরো রমজানজুড়ে নিয়মিত নামাজ আদায় করার পর রমজান পরবর্তী সময়ে যেন তাতে বিরতি না পড়ে। কেননা নামাজ ছেড়ে দেওয়ার পরিণতি বড়ই মারাত্মক। হাদিসে পাকে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইচ্ছাপূর্বক এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজও পরিত্যাগ করবে না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পরিত্যাগ করবে, সে আল্লাহর যিম্মা ও তাঁর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিম্মা থেকে বহিস্কৃত হবে। নাউজুবিল্লাহ (মুসতাদরাকে হাকেম)
মাসব্যাপী রোজা পালনকারীর জন্য এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে?

যদি কোনো রোজাদার ব্যক্তি মাসব্যাপী ইবাদতে রহমত ও সৌভাগ্য পাওয়ার পর আবার নামাজ ছেড়ে দেয় তবে তার যিম্মাদারী আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে থাকেন। আর যার যিম্মাদারি থাকে না, তার ক্ষমা ও শাফাআল পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?

তাই রমজানের এ রোজা পালন ও নিয়মিত ফরজ নামাজ, তারাবিহ, তাহাজ্জুদ কোনো কাজে আসবে না; যদি পরবর্তীতে নিয়মিত নামাজ অনুষ্ঠিত না হয়। তাই শেষ তারাবিহ তাহাজ্জুদসহ সব সময় নামাজের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন জরুরি।

বিশেষ করে…
যদি মুমিন মুসলমান শেষ রমজানের রোজা পালন, তারাবিহ ও তাহাজ্জুদের ইবাদত থেকে বিরত থাকে তবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি হাদিসের ওপর আমল ছুটে যাবে। তাহলো-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার বিগত জীবনের গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াব লাভের আশায় রমজানের রাতের নামাজ (তারাবিহ) পড়ে, তার বিগত জীবনের গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)

৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াব লাভের আশায় রমজানে লাইলাতুল কদরে নামাজ পড়ে, তার বিগত জীবনের গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)

মনে রাখতে হবে
রমজানের শেষ দশকের শেষ সময়ে রোজা পালন, তারাবিহ, তাহাজ্জুদসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগিই অন্তর্ভূক্ত। কোনো রোজাদারেরই উচিত নয়, শেষ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো ঈদের প্রস্তুতি কিংবা অবহেলায় তা থেকে বিরত থাকা। কেননা হতে পারে রমাজনের শেষ সময়ের এ ইবাদত-বন্দেগিই মুমিন মুসলমানের জন্য রমজানের সেরা অনুগ্রহ।

সুতরাং শাওয়ালের চাঁদ দেখার পরও রহমত ও সৌভাগ্য পেতে ঈদের রাতের ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত রাখা। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহে ভাণ্ডার খুলে দেন। রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত দান করেন।

তাই এ রাতে কোনো রোজাদার মুমিন মুসলমানের জন্য উৎসব ও আনন্দের মোহে বিনা ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দেয় ঠিক নয়। কোনো মুমিন মুসলমান রোজাদারের যেন এ ভুলটি না হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈদের নামাজ আদায় করার আগ পর্যন্ত রমজানের শেষ সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করে রমজনের বিশেষ রহমত বরকত মাগফেরাত নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। বিগত জীবনের গোনাহ থেমে মুক্তির তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × four =

Back to top button