BreakingLead Newsআন্তর্জাতিক

রিজার্ভ কমছেই, পতন ঠেকানো যাচ্ছে না

আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ ২,০৯০ কোটি ডলার, তবে প্রকৃত রিজার্ভ ১,৭০০ কোটি ডলারের কম। প্রতি মাসে রিজার্ভ কমছে ১০০ কোটি ডলার করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কমছেই। আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা চেষ্টার পরও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না।

২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ এখন কমে হয়েছে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি (২৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৯০ কোটি (২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার।

এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। আইএমএফ সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি বা ১৭ বিলিয়ন ডলার। গত দুই বছরে প্রতি মাসেই রিজার্ভ গড়ে ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলার করে কমেছে।

‘শুধু আমদানি না, সব ধরনের বিদেশি খরচ যাতে মেটানো যায়, এ জন্য নিট রিজার্ভ ধরে রাখাটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, দুর্যোগ হলে খাদ্য ও সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে, কৃষির জন্য সার আনতেই হবে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এখন যে প্রকৃত রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে শুধু তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে, অন্য কোনো খরচ নয়। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচকই হলো বৈদেশিক মুদ্রার এই রিজার্ভ। কিন্তু এই রিজার্ভের পতনই ঠেকানো যাচ্ছে না।

বাংলাদেশকে দেওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল গত জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, গত সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে রাখতে হবে। এ জন্য লিখিতভাবে বাংলাদেশকে প্রকৃত রিজার্ভের হিসাবায়ন পদ্ধতি জানিয়ে দেয় আইএমএফ। এই হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য আইএমএফকে জানানো শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী, রিজার্ভ রাখতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

দেশে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ঢুকছে এবং যা বেরিয়ে যাচ্ছে, তার প্রকৃত হিসাব মিলছে না। লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে। এখন যে রিজার্ভ আছে, তা বিপজ্জনক পর্যায়ে না গেলেও উদ্বেগজনক পর্যায়ে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন

আইএমএফের দেওয়া লিখিত হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায়, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা অর্থ ও স্পেশাল ড্রয়িং রাইট (এসডিআর) হিসেবে থাকা ডলার বাদ পড়বে। আর তাতেই পাওয়া যায় প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে আইএমএফের চাহিদা অনুযায়ী রিজার্ভ নেই বাংলাদেশের। বর্তমানে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে রয়েছে। এই দলের আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে রিজার্ভের পতন ঠেকানোসহ শর্ত পূরণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা।

অর্থনীতিবিদেরাও দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছেন। গতকাল বুধবার ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের (আইবিএফবি) বার্ষিক সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেছেন, দেশে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ঢুকছে এবং যা বেরিয়ে যাচ্ছে, তার প্রকৃত হিসাব মিলছে না। লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে। এখন যে রিজার্ভ আছে, তা বিপজ্জনক পর্যায়ে না গেলেও উদ্বেগজনক পর্যায়ে। প্রতি মাসে ১ বিলিয়ন ডলার কমছে। এই অবস্থায় চললে একসময় ফুরিয়ে যাবে। তখন ডলারের দাম বাজারে ছেড়ে দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কোনো উপায় থাকবে না।

রিজার্ভ কোথায় আছে
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ নিজের কাছে রাখে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আইএমএফ, স্বর্ণ কেনাসহ নানা খাতে বিনিয়োগ করে। এসব বিনিয়োগ থেকে মুনাফা পায়, মাঝেমধ্যে লোকসানও দেয়। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভের বড় অংশ আছে ডলারে। যার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৮৪৫ কোটি ডলার। গত বছরের জুনে যা ছিল ৩ হাজার ১৯০ কোটি ডলার। এরপর ইউরো, পাউন্ড, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, জাপানিজ ইয়েন, চীনের ইউয়ান, সিঙ্গাপুর ডলারে বিনিয়োগ করে রেখেছে। এ ছাড়া স্বর্ণ কেনা আছে ৮৬ কোটি ডলারের। গত বছরের জুনে স্বর্ণ কেনা ছিল ৮২ কোটি ডলারের।

সংরক্ষণ করা ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক নানাভাবে রিজার্ভ থেকে অর্থ খরচও করেছে। যেমন রিজার্ভের অর্থে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আকার ৭০০ কোটি ডলার থেকে কমিয়ে ৩৭০ কোটি ডলারে নামিয়ে এনেছে। কারণ, গত জুনের রিজার্ভের মজুত হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, শুরু করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। তাদের আরেকটি শর্ত ছিল রিজার্ভ থেকে গঠন করা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ বাদ দিতে হবে।

এ ছাড়া প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব করতে রিজার্ভের অর্থে গঠন করা লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ) ও গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ), বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে দেওয়া অর্থ এবং পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে রিজার্ভ থেকে দেওয়া অর্থ বাদ দিতে হবে। সবকিছু বাদ দিয়েই ১৭ বিলিয়ন ডলারের প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক অবশ্য প্রথম আলোকে বলেন, ডলার-সংকট অনেকটা কমে এসেছে। চলতি হিসাবের লেনদেন ভারসাম্যে উন্নতি হয়েছে। নানা পদক্ষেপের ফলে সামনে আরও উন্নতি হবে।

অন্যদিকে ব্যাংকগুলো এখন আমদানিকারকদের কাছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দামে ডলার বিক্রি করছে। তবে অভিযোগ আছে, বাস্তবে এই দামে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে খুব কম। এ কারণে অবৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনও বেড়ে গেছে।

রিজার্ভ বাড়ে-কমে কীভাবে
প্রতিটি ব্যাংক কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজের কাছে রাখতে পারবে, তার সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোতে ডলার আসে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়, ফ্রিল্যান্সারদের আয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও অনুদানসহ বিদেশি বিভিন্ন আয় থেকে। সীমার বেশি ডলার মজুত হলে ব্যাংকগুলো তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন ঋণ, অনুদান, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে কর্মরতদের আয় সরাসরি যুক্ত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের পক্ষে সরকারি ঋণের কিস্তি, সেবা মাশুল, ফি পরিশোধ করে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে। সরকারি বিভিন্ন আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোকে ডলার দেয়। তখন কমে যায় রিজার্ভ। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ বিক্রি করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিক্রি করা হয় ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

মূলত ডলার-সংকট শুরু হওয়ার পর সব ব্যাংকই ডলারের ঘাটতিতে রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সাধারণত কেউ ডলার বিক্রি করছে না। উল্টো কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নিয়মিত ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে। ফলে রিজার্ভ কমছেই। এ অবস্থায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের কাছেও কম দামে ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

আবার ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে না দিয়ে এখনো ধরে রাখা হয়েছে। ফলে কমছে প্রবাসী আয়ও। এর মধ্যে আবার ডলারের দাম বেশি রাখায় ১০ ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানদের দায়ী করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তাঁদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে। ফলে সংকটকে আরও উসকে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। ডলার-সংকটে মুনাফা নিজ দেশে নিতে পারছে না অনেক বিদেশি সংস্থা। ফলে পরিস্থিতি কী, এটা সহজেই অনুমেয়। সংকট কাটাতে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

এখন আর দাম নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই, দাম যা বাড়ার ঠিকই বেড়ে গেছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির সংকট কাটাতে দেশে ও বিদেশে অভিজ্ঞদের নিয়ে কাউন্সিল গঠন করতে পারে সরকার। যারা সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে পারবে।’

ডলার বাজার পরিস্থিতি
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ডলার-সংকট শুরু হয়েছিল। ডলারের দাম গত দেড় বছরে ৮৮ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকায় উঠেছে। এতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে এখন ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের জোগান ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে সময়ে-সময়ে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম প্রতি মাসেই বাড়ছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি মাস থেকে পণ্য বা সেবা খাতের রপ্তানি আয়ের ডলার ও প্রবাসী আয়ের ডলার কেনায় দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা।

অন্যদিকে ব্যাংকগুলো এখন আমদানিকারকদের কাছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দামে ডলার বিক্রি করছে। তবে অভিযোগ আছে, বাস্তবে এই দামে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে খুব কম। এ কারণে অবৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনও বেড়ে গেছে।

সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু আমদানি না, সব ধরনের বিদেশি খরচ যাতে মেটানো যায়, এ জন্য নিট রিজার্ভ ধরে রাখাটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, দুর্যোগ হলে খাদ্য ও সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে, কৃষির জন্য সার আনতেই হবে।

রিজার্ভ যত কমে যায়, টাকা তত মান হারায়। চাহিদার কারণে আমদানি কমানো হলেও এটা অর্থনীতির জন্য ভালো না। এ জন্য রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। বারবার ডলারের দাম পরিবর্তন করায় বিদেশে থাকা শিক্ষিতরা কম আয় পাঠাচ্ছে। আবার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও আয় কম আসছে।’

সমাধানের পথ হিসেবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দাম ধরে রেখে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। দেশকে ঠিক করতে অর্থ পাচারকারীদের ধরতেই হবে। পাচার কমলে হুন্ডিও কমে আসবে। এতে বাড়বে বৈধ পথে প্রবাসী আয়, যা সংকটে কিছুটা সমাধান হিসেবে কাজ করবে।

সূত্রঃ প্রথমআলো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + nine =

Back to top button