রূপগঞ্জের ৫৩ মৃত্যুঃ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত যেভাবে
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কার্টন কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। শুক্রবার দুপুর নাগাদ আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেজান জুস কারখানার সাত তলা ভবনটির নিচতলায় কার্টন ফ্যাক্টরি থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুনের লেলিহান শিখা একপর্যায়ে পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা ছোটাছুটি শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এমন প্রায় ২৫ জনকে রশি দিয়ে ছাদ থেকে নামিয়েছেন।
আগুন লাগার দেড় ঘণ্টা পর পাঁচতলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের দড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসা শ্রমিক তাজুল ইসলাম জানান, কারখানার ভেতরে নুডুলস, জুস, চকলেট, কেক তৈরি এবং এসব পণ্য প্যাকেটজাত করার জন্য প্লাস্টিকের বিপুল পরিমাণ পণ্য মজুত ছিল। যে কারণে নিচতলায় কার্টনের মধ্যে লাগে আগুন। কিছু বুঝে উঠার আগেই ছড়িয়ে পড়ে কারখানা জুড়ে।
তাজুল ইসলাম আরও জানান, বিকাল পাঁচটার দিকে স্টোররুম থেকে কিছু মালামাল আনার জন্য যাই। এ সময় নিচ থেকে আগুন আগুন বলে শ্রমিকদের চিৎকার শুনি। সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে চেয়ে দেখি ধোঁয়া আর ধোঁয়া। এমন ধোঁয়া আর আগুনের তাপ যে, কোনও অবস্থাতেই নিচে নামার সুযোগ মিলেনি। পরে বাধ্য হয়ে সিঁড়ি বেয়ে পাঁচতলার ছাদের ওপর পানির ট্যাংকির উপর গিয়ে আশ্রয় নেই। সেখানে আমার মতো আরও ১৩-১৪ জন শ্রমিক আশ্রয় নেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে উপরে দড়ি দিলে আমরা তা বেয়ে নিচে নেমে আসি। তিনি আরও বলেন, আমার সবাই দড়ি বেয়ে নিচে নামি। আগুন যখন জ্বলছিল তখন জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে বার বার আল্লাহকে ডাকছিলাম। মা-বাবার দোয়া এবং আল্লাহর অশেষ রহমতের কারণেই জীবন নিয়ে বাঁচতে পেরেছি।
বৃহস্পতিবার রাতে ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. তানহারুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, হাশেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কারখানার নিচ তলার কার্টনের ফ্যাক্টরি থেকে আগুনের সূত্রপাত। খবর পেয়ে ডেমরা, কাঞ্চন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি বলেছিলেন, ‘এটি একটি ফুড বেভারেজ কারখানা। এখানে জুসসহ কোমল পানীয় তৈরি করা হয়। ওই কারখানার নিচতলার কার্টনের ফ্যাক্টরিতে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে তা জানা যায়নি।’
শুক্রবার দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা হাসেম ফুড কারখানার ভেতর থেকে মরদেহগুলো একের পর এক বের করে আনেন। এর পর গাড়ি দিয়ে লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীস বর্ধন জানান, এখন পর্যন্ত কারখানার ভেতর থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আর মেডিকেলে তিনজন মারা গেছেন। আজকে উদ্ধার করা লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহতদের বেশিরভাগই শিশু। আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ শাহ আলম বলেন, মধ্যরাতে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও সকাল ৬টার দিকে কারখানার চারতলায় আবারও আগুন বাড়তে থাকে। আগুন নিয়ন্ত্রণের আগ পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।