ম্যাচের শুরুতেই তাঁকে চমকে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। ইউরোর ইতিহাসে কখনো ফাইনাল না খেলা দলটিই করে বসেছিল ফাইনালের ইতিহাসের দ্রুততম গোল। মাত্র দুই মিনিটে দোন্নারুম্মাকে বোকা বানিয়ে গোল করেছিলেন লুক শ। প্রথমার্ধে অচেনা ইতালির ধারহীন খেলার ফায়দা তুলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে গিয়েছিল ওয়েম্বলির উপচে পড়া ভিড়ের উৎসাহ নিয়ে খেলতে নামা ইংল্যান্ড।
বিরতির পর বদলে গেছে সব। ছন্দে ফিরেছে ইতালি, ধারও বেড়েছে আক্রমণের। আর সে ধার তাদের ২২ মিনিটের দিকে এনে দিয়েছে সমতা। দ্বিতীয়ার্ধের বাকিটাও শ্রেয়তর দল হিসেবে ইতালি খেলেছে । কিন্তু ৯০ মিনিটেও হয়নি ম্যাচের মিমাংসা। শেষ হয়নি অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিটেও। টাইব্রেকারেই যেতে হয়েছে দুই দলকে। আর সেখানে ইতালির দিকে ভাগ্য ফিরে তাকিয়েছে। দোন্নারুম্মার দুর্দান্ত দুটি হাতের সুবাদে ৩-২ ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরো জিতে নিয়েছে আজ্জুরিরা।
ফুটবলকে ‘হোম’ বা ঘরে ফেরানোর স্বপ্ন দেখছিল ইংল্যান্ড। ইতালি ওদিকে সে স্বপ্ন গুড়িয়ে রোমেই ইউরোর ঠাঁই দিতে চেয়েছে। পেনাল্টি শ্যুটআউটে জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ইতালিকে ৫৩ বছর পর ইউরোর স্বাদ এনে দিল। প্রথম দুটি শট থেকে গোল করা ইংল্যান্ড পরের তিনটি শটেই ব্যর্থ হয়েছে।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে প্রতি আক্রমণে ওঠে ইংল্যান্ড। সে আক্রমণ থেকেই হয় গোল! বক্সের ডান দিক থেকে কিয়েরান ট্রিপিয়ারের ক্রস নামিয়ে নিয়ে জোরালো এক শট আরেক ফুলব্যাক লুক শর। সে গোলা পোস্টে লেগে জালে চলে গেল। দ্বিতীয় মিনিটেই হয় গোল!
ইউরোর ফাইনালের ইতিহাসের দ্রুততম সে গোলের পর জেগে উঠতে সময় নিয়েছে ইতালি। কিন্তু তাদের খেলায় পুরো টুর্নামেন্টের সেই ইতালির স্বাদ পাওয়া যায়নি। প্রথমার্ধ শেষে ইংল্যান্ড তাই ১-০ গোলে এগিয়ে থাকল।
প্রথমার্ধের খেলা দেখে প্রথমেই প্রশ্ন জেগেছে-এ কোন ইতালি? টুর্নামেন্ট জুড়ে আক্রমণাত্মক ও পাসিং ফুটবল দিয়ে মুগ্ধ করেছিল ইতালি। সে দল আজ প্রথমার্ধে পাসিং ফুটবল খেলেছে ঠিকই কিন্তু তাতে আক্রমণের ধার ছিল না তাতে। নিচ থেকে পাস দেওয়া হচ্ছিল মাঝমাঠে। সেখানে একের পর এক পাসে বল এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাচ্ছিল। ঘুরে ফিরে বাঁ দিক থেকে ডান দিক। ডান দিক থেকে বাঁ দিক।
কিন্তু মূল কাজটা আর হচ্ছিল না। বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢোকা হচ্ছিল না ইতালির। দূর পাল্লার যে কয়েকটি শট নেওয়া হচ্ছিল সেগুলো রাগবিতে কাজ লাগলেও লাগতে পারে কিন্তু ফুটবলে সেগুলো মূল্যহীন।
ইংল্যান্ড তাদের গতিটা কাজে ক্লাগাতে চেয়েছে। হ্যারি কেইনের মতো একজন স্ট্রাইকারকে কড়া নজরে রাখতেই হয়। আর সেটা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন জর্জো কিয়েল্লিনি। কিন্তু কেইন বারবার মাঝমাঠে নেমে আসায় কিয়েল্লিনির পজিশনিং নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল আর সে সুযোগে ডান উইং ধরে উঠে যাচ্ছিলেন ট্রিপিয়ার। এমন এক আক্রমণেই তো ম্যাচের শুরুতে অনায়াসে শর দিকে ক্রস পাঠাতে পেরেছিলেন ইংল্যান্ডের এই রাইটব্যাক।
৫৫ মিনিটে মানচিনিকে তাই বদল আনতেই হলো। ম্যাচে জড়তার অন্য নাম হয়ে থাকা চিরো ইমমোবিলেকে তুলে নেওয়া হলো। নামলেন ডমেনিকো বেরার্দি। নিকোলো বারেল্লার বদলি নামলেন ব্রায়ান ক্রিস্তান্তে।
ইতালির খেলায়ও প্রাণ ফেরে। ৬২ মিনিটে কিয়েসার শট ঝাঁপিয়ে পড়ে পিকোফোর্ড ঠেকিয়ে না দিলে ম্যাচে ফিরতে পারত ইতালি। অবশ্য ম্যাচে ইতালির সব ভালো আক্রমণেই জট্রিয়ে ছিলেন জুভেন্টাস উইঙ্গার। ইতালির সমতা ফেরানোও তাঁর সুবাদে।
৬৬ মিনিটে বক্সে দারুণ এক ক্রস করেছিলেন কিয়েসা। সেটা ইতালির কোন খেলোয়াড়কে খুঁজে না পেলেও ইংলিশ ডিফেন্ডার কোনো ঝুঁকি নেননি, হেড করে বাইরে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে পাওয়া কর্নার নিয়েছিলেন লরেন্সো ইনসিনিয়ে। ট্রিপিয়ারের কাঁধ হয়ে বল গিয়ে পৌছায় মার্কো ভেরাত্তির কাছে। ভেরাত্তির হেড জালে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু পিকফোর্ডের দারুণ সেভ সেটা হতে দেয়নি, কিন্তু ফিরতি বল গোলের কয়েক ফুট সামনে গিয়ে পড়ে। লিওনার্দো বোনুচ্চি কোনো ভুল করেননি।