রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে
কক্সবাজার জেলায় করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। যেভাবে প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে সেই আশঙ্কা অমূলক নয়। বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে করোনাক্রান্তের দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত সাত দিনে ১৪৯ জন (১৮%) রোহিঙ্গা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এর মধ্যে ১৩ মে ১৫০টি নমুনার মধ্যে শনাক্ত হয় ২৯ জন(১৫%),
১৪মে ৭১টি নমুনার মধ্যে শনাক্ত হয় ৮ জন(১১%),
১৫ মে ৭৪ টি নমুনার মধ্যে শনাক্ত হয় ১০ জন(১৪%),
১৬মে ৩৬টি নমুনার মধ্যে শনাক্ত হয় ৫ জন(১৪%) ,
১৭মে ৭৫টি নমুনার মধ্যে শনাক্ত হয় ২৩জন(৩১%),
১৮মে ১৭৪টি নমুনার মধ্যে শনাক্ত হয় ২৯ জন (১৭%) এবং
১৯ মে২৪৫টি নমুনার মধ্যে শনাক্ত হয় সর্বাধিক ৪৫ জন (২২%) ।
এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবিরে মারাত্মকভাবে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর৷ কক্সবাজারে বসবাসরতরা বিশ্বে মহামারির সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে তারা৷ সংক্রমণ ঠেকাতে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তার আহবানও জানিয়েছে৷ মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে ১১ লাখের বেশি অবস্থান করছে।
১৯ মে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত চব্বিশ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সর্বাধিক ৪৫ জন রোহিঙ্গাসহ ৯০ জন৷ এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ হাজার ৩৫৫ জনে।
কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ জন।তন্মধ্যে সদর উপজেলা ও পৌরসভার ১৫ জন,উখিয়া উপজেলায় ৯ জন,টেকনাফ উপজেলায় ১১ জন,চকরিয়া উপজেলায় ৫ জন,মহেশখালী উপজেলায় ২ জন,রামু উপজেলায় ৩ জন এবং ৪৫ জন রোহিঙ্গা। নেগেটিভ ছিলেন ৬৫৫ জন আর ফলোআপ ছিলেন ৪ জন। এছাড়া এদিন রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরের ২৪৫টি নমুনার মধ্যে ৪৫ জন পজিটিভ ছিলেন।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭২৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে ৯০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ হাজার ৩৫৫ জনে। সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ২১২জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ১৭৬ জন। নতুন করে কারো প্রাণহানি ঘটেনি।
জেলায় করোনায় এখন পর্যন্ত মোট ১৩ রোহিঙ্গাসহ ১০৫ জন মারা গেছেন। তার মধ্যে সর্বাধিক কক্সবাজার পৌরসভা ও সদর উপজেলাতেই ৫৪ জনের মৃত্যূ হয়েছে। আক্রান্তের দিক দিয়েও এগিয়ে রয়েছে এই এলাকা।এছাড়া জেলায় করোনাক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৮৬৮ জন।এর মধ্যে উখিয়ায় ৬৯৮ জন এবং টেকনাফে ১৭০ জন।
উল্লেখ্য দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রথম পর্যায়ের থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। এখনো পর্যন্ত দেশের কিছু জেলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কিন্তু আবার বেশ কিছু জেলায় বেলাগাম হয়ে গিয়েছে করোনা পরিস্থিতি। এর জেরে স্বাভাবিক ভাবেই গোটা দেশে ফের একবার আতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে কক্সবাজার জেলাতেও।