Breakingধর্ম ও জীবনবিবিধ

রোহিঙ্গা ভাষায় কুরআনের প্রথম অনুবাদ প্রকাশ!

নির্যাতিত জনগোষ্ঠী রাখাইনের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। রোহিঙ্গারা মুসলিম হলে এখনও প্রকাশিত হয়নি নিজ ভাষায় কুরআনের কোনো অনুবাদ। রমজান উপলক্ষে এই প্রথম রোহিঙ্গা ভাষায় কুরআন অনুবাদের অডিও-ভিডিও অনালাইনে চালু হতে যাচ্ছে।

কয়েক ধাপের এ কাজটি তত্ত্বাবধানে রয়েছে সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল রোহিঙ্গা ভিশন ও মালয়েশিয়াভিত্তিক দাকওয়া কর্নার বুকস্টোর (ডিসিবি)। খবর টার্কিশ রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন (টিআরটি) ওয়ার্ল্ড

সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল রোহিঙ্গা ভিশনও বিশ্বের প্রথম রোহিঙ্গা ভাষায় প্রচারিত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া।

রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিজ ভাষায় পবিত্র কুরআন বুঝে অধ্যয়ন করার কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ কুরআন মাজিদের কোনো রোহিঙ্গা ভাষার অনুবাদ পাণ্ডুলিপি নেই। তবে চলতি মাস থেকেই অডিও-ভিডিও অনলাইনে পাওয়া যাবে। যা শুনে তারা কুরআন মাজিদের কথাগুলো বুঝতে পারবে।

টার্কিশ রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন (টিআরটি) ওয়ার্ল্ড-এর তথ্য মতে, সরাসরি আরবি ভাষা থেকে রোহিঙ্গা ভাষায় অনুবাদ করাহবে না। বরং সৌদি আরবের কিং ফাহাদ প্রকাশনা কর্তৃক প্রকাশিত ইংরেজি সংস্করণ অবলম্বনে অনূদিত হয়েছে রোহিঙ্গা পাণ্ডুলিপি।

৩০ পারার ১১৪টি সুরার হাই-ডেফিনেশন (এইচডি) সংস্করণটি একাধিক কিস্তিতে ধাপে ধাপে প্রকাশ করা হবে। পবিত্র মাস রমজান মাস সামনে রেখে অনলাইনে রোহিঙ্গা ভাষায় অনূদিত কুরআনের প্রথম কিস্তি প্রকাশ করা হবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে।

সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল রোহিঙ্গা ভিশন ও মালয়েশিয়াভিত্তিক দাকওয়া কর্নার বুকস্টোরের (ডিসিবি) উদ্যোগ এই রোহিঙ্গা ভাষার কুরআন  অনুবাদে ৮১ হাজার ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি।

রোহিঙ্গা ভাষায় কুরআন অনুবাদের অডিও-ভিডিও’তে মদিনার মসজিদে নববির প্রয়াত ইমাম শায়খ মুহাম্মদ আইয়ুব রাহমাতুল্লাহি আলাইহির তেলাওয়াত। তিনি পঞ্চাশের দশকে সৌদি আরবের মক্কায় রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।

রোহিঙ্গা ভাষায় অনূদিত কুরআনের মূল কাজটি করছেন ধর্মীয় নেতা কুতুব শাহ। কারিগরি প্রকৌশলের সাবেক এই শিক্ষার্থী রোহিঙ্গা বলে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা সম্পন্ন করতে দেয়নি মিয়ানমার সরকার। বর্তমানে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে  ‘কম্পারেটিভ রিলিজিয়ন’-এর ওপর তিনি পিএইচডি করছেন।

এছাড়া রোহিঙ্গা ভাষায় কুরআন অনুবাদের অন্যতম উদ্যোক্তা, মানবাধিকারকর্মী ও রোহিঙ্গা ভিশনের সত্বাধিকারী মুহাম্মদ নূর বলেন, ‘নিজ দেশে রোহিঙ্গা ভাষায় লেখাপড়া করার অধিকারটুকুই পাইনি আমরা। নির্দেশ অমান্য করে এইটুকু করার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হয় আমাদের। হয় মরতে হয়, না হলে কারাবন্দি থাকতে হয়।’

অতীতেও বেশ কয়েকবার রোহিঙ্গা ভাষায় কুরআন অনুবাদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সময় উর্দু, আরবি ও লাতিন ভাষা থেকে রোহিঙ্গা ভাষায় পাণ্ডুলিপি আকারে কুরআন প্রকাশের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই অসম্পূর্ণ থেকে গেছে সেসব প্রচেষ্টা।

প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার হার ভীষণ কম। দশকের পর দশক মিয়ানমারে তাদের শিক্ষা গ্রহণ ও কাজ করা নিষিদ্ধ করে রেখেছে দেশটির সরকার। এমনকি রোহিঙ্গা হিসেবে নিজ জাতিগত পরিচয়ের স্বীকৃতিও দেয়া হয় না তাদের।

এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে আশ্রয় নেয়া অনেক রোহিঙ্গা অভিবাসী নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তাদের একজন ষাটের দশকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে আশ্রয় নেওয়া নূরের পরিবার।

রোহিঙ্গা ভাষায় কথা বলতে পারেন ও ভাষাটি বোঝেন, এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। কিন্তু গত ১০০ বছরের বেশি সময়ে ভাষাটির লিখিত রূপ (বর্ণমালা ও শব্দ) বেশ কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। আশির দশকে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শিক্ষাবিদ মাওলানা মুহাম্মদ হানিফ একটি ভাষা ব্যবস্থা দাঁড় করাতে সক্ষম হন, যা পরিচিতি পায় ‘রোহিঙ্গা হানিফি’ নামে।

‘ভারত বা পাকিস্তানে গিয়ে যারা লেখাপড়া করেছেন, তাদের মধ্যে উর্দু ভাষায় কুরআন অনুবাদের প্রবণতা ছিল। আবার যারা মধ্যপ্রাচ্যে আছেন, তারা আরবি ভাষানির্ভর অনুবাদ করেছেন। কিন্তু এগুলোর কোনোটিই বেশিরভাগ রোহিঙ্গা পড়তে পারেন না।’

এ কারণেই অডিও ও ভিডিও আকারে কুরআনের রোহিঙ্গা অনুবাদের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। যেন তৃণমূলের মানুষদের কাজে লাগে এটি। ‘পড়ে বুঝতে হবে না, শুনে বুঝতে পারবেন তারা। তাই এখনই বই আকারে রোহিঙ্গা কুরআন বের করার পরিকল্পনা আমাদের নেই। সময় ও সুযোগ হলে পরে কখনও হতে পারে বলেও জানিয়েছেন মুহাম্মদ নূর।’

রোহিঙ্গা হানাফি ভাষায় ইউনিকোড তৈরি করেছেন নূর। এটি ব্যবহার করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে সহজ যোগাযোগ করা শিখে গেছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত সংখ্যালঘু হলো রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাদের বর্বরতার শিকার গোষ্ঠীটির ১১ লাখের বেশি মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার অসহায় রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মাণ করেছে বিশেষ আশ্রয়ন প্রকল্প।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 2 =

Back to top button