করোনাভাইরাসভাইরাল

লকডাউনে আটকে পড়া ছেলেকে আনতে ১৪শ কি.মি. পাড়ি দিলেন মা

সন্তানের নিকট সবচেয়ে কাছের মানুষটি হলো তার মা। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার কথাও আমরা সবাই জানি। সম্প্রতি সেই ভালোবাসারই নতুন নজির গড়েছেন ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের এক মা। লকডাউনের কারণে আটকে পড়া সন্তানকে নিরাপদে ঘরে নিয়ে আসতে পাড়ি দিয়েছেন ১৪শ’ কিলোমিটারেরও বেশি দুরত্ব।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ২১ দিনের লকডাউন চলছে ভারতে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজনের ঘরের বাইরে যাওয়ায় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এই লকডাউনের কারণে আরেক রাজ্যে আটকে পড়ে নাজিমুদ্দিন নামের এক তরুন।

তার বিপদের কথা চিন্তা করে তিনদিন স্কুটি চালিয়ে ১৪শ’ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন মা রাজিয়া বেগম।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, স্থানীয় পুলিশের অনুমতি নিয়ে তেলেঙ্গানা রাজ্য থেকে গত সোমবার যাত্রা শুরু করেন রাজিয়া বেগম (৪৮)।  উদ্দেশ্য পার্শ্ববর্তী রাজ‌্য অন্ধ্রপ্রদেশে আটকে পড়া ছেলেকে বাড়ি নিয়ে আসা।  এজন্য তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে এক হাজার চারশ’ কিলোমিটার পথ। আর তা সফলভাবে শেষে করে গত বুধবার ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন রাজিয়া।

এ বিষয়ে রাজিয়া বেগমের বক্তব্য, দুইচাকার যান স্কুটি চালিয়ে এতো রাস্তা পাড়ি দেয়া একজন নারীর পক্ষে ছিল খুবই কঠিন কাজ। তবে ছেলেকে ঘরে আনার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা আমার সব ভয়কে দূরে ঠেলে দিয়েছিল। যাত্রা পথে আমি এমন সময় পার করেছি যখন দেখেছি রাতের আঁধারে কোথাও কেউ নেই। চারিদিকে শুধু সুনসান নীরবতা।

রাজিয়া বেগম হায়দ্রাবাদ থেকে দুইশ’ কিলোমিটার দূরে নিজামাবাদ সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। ১৫ বছর আগে তিনি তার স্বামীকে হারান। তার দুই সন্তানের একজন প্রকৌশলী গ্রাজুয়েট, অন্যজন ১৯ বছর বয়সী নাজিমুদ্দিন। যার কিনা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন।

বন্ধুকে রেখে আসতে গত ১২ মার্চ নাজিমুদ্দিন তেলেঙ্গানার নিলোরের রাহামাতাবাদে যান। কিন্তু এর মধ্যে ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণায় তিনি সেখানে আটকা পড়েন। আর ছোট ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে পুলিশের ভয়ে বড় ছেলেকে পাঠাননি রাজিয়া। সেখানে কীভাবে পৌঁছানো যায় সে পরিকল্পনায় প্রথমে গাড়ির কথা মাথায় এলেও, পরে তা ঝেড়ে ফেলে দুই চাকার স্কুটিতেই ভরসা খুঁজে পান।

অবশেষে স্কুটি চালিয়েই ভিন রাজ্যে আটকে পড়া ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে সফল হন দৃঢ় প্রত‌্যয়ী এই নারী।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 14 =

Back to top button