বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় একজন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর তার মৃতদেহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) বিভিন্ন সংস্থা ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে। লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম শুক্রবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির নাম আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবী (৫০)। তাঁর বাড়ি রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ায়। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক। একই ঘটনায় গণপিটুনিতে আহত হন সুলতান জোবায়ের নামের একজন। তাঁর ও শহীদুন্নবীর বাড়ি একই এলাকায়।
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম শুক্রবার পাটগ্রাম থানায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছি। সিআইডিসহ অন্যান্য সংস্থা ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের জামায়াত শেষে মুসল্লিরা মসজিদ ছেড়ে বের হয়ে যান। পেছনে পড়া অল্প কিছু লোকজনের চিৎকারে মুসল্লিরা ফিরে আসেন মসজিদে। পরে বাজারের ব্যবসায়ী ও বাজরে আসা লোকজন জড়ো হয়। উপস্থিত জনতার মধ্যে শোরগোল ওঠে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, গোয়েন্দা সংস্থার লোক পরিচয়ে দুই জন ব্যক্তি মসজিদে বোমা ও জঙ্গি আছে বলে তল্লাসি করার সময় কোরআন শরীফ অবমাননা করেছে।
জড়ো হওয়া লোকজনের মধ্য থেকে কয়েকজন এসময় দুইজনকে মারপিট শুরু করে। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাফিজুল ইসলাম মসজিদে গিয়ে নানাভাবে মুসল্লিদের অনুরোধ করে ওই দুজনকে পাশের ইউপি কার্যালয়ে এনে একটি কক্ষে রাখেন। এদিকে আরো শত শত মানুষ জড়ো হতে থাকে।
খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদ নেওয়াজ নিশাদ পুলিশে খবর দেন। পুলিশ যেতে যেতে লোকারণ্য হয়ে পড়ে আশপাশের এলাকা। থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত, ইউএনও কামরুন্নাহার, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল কোন রকমে ইউপি কার্যালয়ের ভেতর ঢুকতে পারলেও অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে নিয়ে বের হতে পারেনি। বাইরে লোকজন কোরআন অবমাননাকারী আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে হত্যার জন্য ওই দুইজনকে তাদের হাতে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানায়। এক পর্যায়ে কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। পুরো দেড় ঘণ্টা ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালায়। সংখ্যায় কম হওয়ায় পুলিশসহ ভেতরে থাকা লোকজন কুলিয়ে উঠতে পারেননি।
সন্ধ্যার আগে হাজার হাজার লোক আসে ইউপি কার্যালয়ে। এক পর্যায়ে বারান্দার একপাশের গ্রিল ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে দুজনের একজনকে ছিনিয়ে মাঠের মধ্যে নিয়ে গলায় দড়ি বেঁধে রাস্তা দিয়ে টানতে টানতে ২শ মিটার দূরে নিয়ে যায়। রাস্তার ওপর ফেলে পিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
পুলিশ অপরজনকে নিয়ে কৌশলে ইউপি কার্যালয়ের দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে একটি ব্যাংকে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানেও ব্যাপক হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়।
বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান এবং মেম্বররা জানান, প্রথম দফায় আসা লোকজনকে শান্ত করে আনা সম্ভব হয়েছিলো। কিন্তু সন্ধ্যার পর একটি গ্রুপ যোগ দেয়। মূলত এরাই বেশি উ-শৃঙ্খলতা দেখায়।
পাটগ্রাম থানার ওসি বলেছেন, যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা প্রকাশ্যেই ঘটিয়েছে। তাদের সকলের ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহে আছে। ইন্ধন ও উস্কানিদাতা সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
টানা ৫/৬ ঘণ্টা ধরে এই বীভৎস তাণ্ডব চলার পর রাতে র্যাব, ৩ প্লাটুন বিজিবি ও রিজার্ভ পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।