জাতীয়

নৌবাহিনী প্রধান হলেন শাহীন ইকবাল

নতুন নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, এনবিপি, এনইউপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসিকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তাঁকে ভাইস অ্যাডমিরাল পদে পদোন্নতি দিয়ে নৌপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুল আলীম খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। পরে একই তথ্য জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

আইএসপিআর জানিয়েছে, আগামী ২৫ জুলাই অপরাহ্ন থেকে ভাইস অ্যাডমিরাল পদে পদোন্নতি পূর্বক বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন এম শাহীন ইকবাল। আগামী ২৪ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি পূর্বতন নৌপ্রধান অ্যাডমিরাল এ এম এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী, এনবিপি, ওএসপি, বিসিজিএম, পিসিজিএম, বিসিজিএমএস, এনডিসি, পিএসসির স্থলাভিষিক্ত হবেন।

নবনিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধান শাহীন ইকবালের জীবন বৃত্তান্ত

আইএসপিআর জানিয়েছে, রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ১৯৮০ সালের ১ জুন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি এক্সিকিউটিভ শাখায় কমিশন লাভ করেন। দীর্ঘ ও সুপরিচিত ৪০ বছরের কর্মজীবনে তিনি দৃষ্টান্তমূলক সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন। পেশাদারত্ব, সততা ও একনিষ্ঠতার জন্য তিনি নৌবাহিনীর সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও নাবিকদের কাছে সুপরিচিত। তিনি নৌবাহিনী ফ্রিগেটসহ সব শ্রেণির জাহাজ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি কমান্ড করেছেন। তা ছাড়া, তিনি নৌসদরে সহকারী নৌপ্রধান (অপারেশন্স), সহকারী নৌপ্রধান (পার্সোনেল), পরিচালক নৌ অপারেশন্স, পরিচালক নৌ গোয়েন্দা, চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার, খুলনা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে পালন করেন। চাকরি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ নেতৃত্বের গুণাবলী, সুদূর প্রসারী চিন্তাভাবনা, আন্তরিকতা ও সততার ছাপ রেখেছেন।

দীর্ঘ চাকরিজীবনে শাহীন ইকবাল দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও সামরিক কৌশলগত শিক্ষা অর্জন করেছেন। তিনি প্রতিটি প্রশিক্ষণে উচ্চতর গ্রেডিং অর্জন এবং কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় নৌবাহিনী প্রধানের কাছ থেকে সর্বোচ্চ প্রশংসা প্রাপ্তসহ নানা ধরনের সম্মানে ভূষিত হন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে নেভাল স্টাফ কোর্স, মেরিটাইম কম্পোনেন্ট কমান্ডার ফ্ল্যাগ অফিসার কোর্স, ইন্টারন্যাশনাল সারফেস ওয়ারফেয়ার কোর্স, ভারত থেকে এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার কোর্স এবং মিরপুর ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে এনডিসি কোর্সসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন।

চাকরি জীবনে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিশেষ অবদান রাখেন। ২০১৩ সালে খুলনা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডারের দায়িত্ব পালনকালে তিনি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিচারক ও বিশ্লেষক দলের সঙ্গে কাজ করেন এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্থানীয় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, মিয়ানমার-টেকনাফ মাদক এবং মানবপাচার রোধে বিশেষ অবদান রাখাসহ জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পালন করেন।

২০১৭ সালে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুনর্বাসনের জন্য ভাসানচর প্রকল্পের বাস্তবায়নে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রকল্পের পরিকল্পনা, তদারকি ও বাস্তবায়ন কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা মোতাবেক প্রকল্প সূচনার মাত্র ১০ মাসের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য একটি প্রত্যন্ত দ্বীপকে বাসযোগ্য করে তোলার মাধ্যমে তিনি সব মহলের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন।

বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল আন্তর্জাতিক মেরিটাইম পরিমণ্ডলে একাধিকবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ভারত, সৌদি আরব, কুয়েত এবং কাতারসহ বিভিন্ন দেশে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও সামরিক প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল তাঁর অসামান্য একাডেমিক সাফল্য ও পেশাদারির জন্য নৌবাহিনীর সর্বোচ্চ পদক (এনবিপি) এবং নৌ উৎকর্ষ পদকে (এনইউপি) ভূষিত হন।

ব্যক্তি জীবনে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ঢাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান, তাঁর আদিবাস কুমিল্লায়। পারিবারিক জীবনে তিনি মনিরা রওশন আক্তারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের একমাত্র ছেলে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে কর্মরত এবং তাঁর স্ত্রী ইউএনএফপিএতে গবেষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবালের বিস্তৃত অভিজ্ঞতা, সাধারণ জীবনযাপন এবং অসাধারণ নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা নৌবাহিনীর সর্বস্তরের সদস্যদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আরো সমৃদ্ধ হবে বলে সবার প্রত্যাশা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 4 =

Back to top button