লাইফস্টাইল

শিশুর জন্য বাড়িতেই বানান ‘পুষ্টিগুঁড়া’

শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করা খুব জরুরি। এ জন্য বিশেষ নজর দিতে হবে তাদের খাদ্য ও পুষ্টির ওপর। ঘরে থাকা বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য দিয়ে নিজেই বানিয়ে নিতে পারেন পরিবারের ছোট সদস্যের (৬+ মাস) জন্য মজাদার, পুষ্টিকর ও নিরাপদ সিরিয়াল, যাকে বলে ‘পুষ্টিগুঁড়া’। পুষ্টিতে ভরপুর, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সহায়ক এই খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ সোনিয়া আহমেদ।

প্রয়োজনীয় উপাদান

► লাল বিন্নি চাল এক কাপ, নাজিরশাইল এক কাপ, পোলাউ চাল এক কাপ, মুগডাল এক কাপ, মসুর ডাল এক কাপ, ছোলার ডাল আধাকাপ, সাবুদানা আধাকাপ, এলাচদানা ৮-১০টি।
► কোনো সমস্যা না থাকলে নিতে পারেন আধাকাপ গম।
► একটু বড় শিশুদের জন্য এই সিরিয়াল তৈরিতে ভুট্টা, রাজমা বিন, কলাইয়ের ডাল, সবুজ মুগডালও আধাকাপ করে ব্যবহার করতে পারেন।

পুষ্টিতথ্য
চাল

বিভিন্ন প্রকার চালে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’, ভিটামিন-বি৬, থায়ামিন, নায়াসিন, ফলেট, কোলাইন, বিটাইন, রিবোফ্লাভিন ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, দস্তা ও তামা। এতে অল্প পরিমাণ সোডিয়াম, সেলেনিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে।

এসব উপাদান শিশুকে পর্যাপ্ত শক্তি দেবে, রক্তস্বল্পতা দূর করবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

ডাল
নানা ধরনের ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স, ফাইবার, কপার, ফলেটের মতো উপাদান শিশুর দেহের জন্য প্রয়োজনীয়। এসব উপাদান দেহের গঠন মজবুত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

বাদাম
বিভিন্ন ধরনের বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘ই’, ফাইবার, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ‘সি’, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো এসিড, পটাসিয়াম এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। এসব উপাদান শিশুর মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো, ত্বকের জন্য উপকারী, হাড় মজবুত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি করে।

খেজুর
খেজুরে রয়েছে প্রচুর খাদ্যশক্তি, ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘কে’, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, কপারের মতো প্রায় ১৫টি খনিজ উপাদান।

এসব উপাদান শিশুর শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্তস্বল্পতা দূর করে, হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, দৃষ্টিশক্তির উন্নতি করে, অরুচি দূর করে, হজমে সহায়তা করে।

আখের গুড়
এতে থাকে প্রোটিন, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ফসফেট, আয়রন, ক্যারোটিন, খনিজ লবণ প্রভৃতি। এ ছাড়া এতে নিয়াসিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, সুক্রোজ, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে, ত্বকের উজ্জ-লতা বৃদ্ধি করে, পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।

তৈরি করার পদ্ধতি

সাবুদানা বাদে প্রতিটি উপাদান খুব ভালো করে ধুয়ে, পানি ঝরিয়ে রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিন। এরপর নিচের নিয়মানুযায়ী একে একে সব কটি উপাদান শুকনা খোলায় ভাজতে থাকুন।

► চালগুলো কিছুটা ফুলে না ওঠা পর্যন্ত ভাজতে থাকুন।

► ডালগুলো বাদামি ও কিছুটা মুচমুচে হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।

► সাবুদানা চাইলে ভেজে নিতে পারেন অথবা না-ও ভাজতে পারেন।

► এলাচদানা যতক্ষণ না সুগন্ধ ছড়াচ্ছে ততক্ষণ ভাজতে থাকুন।

► ভাজা উপাদানগুলোকে ঠাণ্ডা করে নিন।

► এবার ঠাণ্ডা চাল, ডাল আর মসলা ব্লেন্ডার বা গ্রাইন্ডারে গুঁড়া করে নিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল পুষ্টিকর ঘরোয়া সিরিয়াল।


রেসিপি
দুই কাপ গরম পানিতে ভালো করে সিরিয়াল মেশান, যেন দলা না পাকিয়ে যায়। বারবার নাড়তে থাকুন, শিশুর পছন্দের ঘনত্বে এলে একটু ঘি/বাটার/রান্নার তেল মিশিয়ে নামিয়ে নিন। কুসুম গরম অবস্থায় শিশুকে পরিবেশন করুন।

এই সিরিয়ালের সঙ্গে শিশুর পছন্দ অনুযায়ী পাকা কলা, পাকা আম, পাকা পেঁপে, ড্রাগন ফ্রুটসের মতো যেকোনো নরম ফল চটকে বা ছোট করে কেটে মিশিয়ে দিতে পারেন। দিতে পারেন বিভিন্ন ধরনের বাদামগুঁড়া ও মিষ্টি স্বাদের জন্য খেজুরগুঁড়া অথবা আখের গুড়।

সংরক্ষণ
এয়ারটাইট কৌটায় রেখে সংরক্ষণ করলে এক মাস পর্যন্ত এবং ফ্রিজারে রেখে চার থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে এই পুষ্টিকর ঘরোয়া সিরিয়াল।

সতর্কতা
► শিশুর হজম করার ক্ষমতা ও কোনো বিশেষ খাবারে শিশুর অ্যালার্জি আছে কি না, তা অবশ্যই আগে যাচাই করে নেবেন।

► সিরিয়ালটি তৈরির সময় অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দেবেন।

► কাচের পাত্রে এই সিরিয়াল সংরক্ষণ করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × four =

Back to top button