শিল্প ও বাণিজ্য

শুধু মুখে মুখে বা কাগজে কলমে নয়; বাস্তবেই বিসিক

শিল্পনগরিগুলোতে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালুর নির্দেশ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। তিনি বলেন, দেশের ৭৬টি বিসিক শিল্পনগরিতে উদ্যোক্তারা যাতে সহজে ও অল্প খরচে দ্রুত শিল্প সংশ্লিষ্ট কার্যকর সেবা পান, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পখাতে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে এক ছাদের নিচে শিল্প স্থাপনের সব ধরণের সেবা দিতে হবে। গ্রাহক পর্যায়ে প্রত্যাশিত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন ২০১৮ এর ‘ক’ তফসিলে বিসিককে অন্তর্ভুক্ত করেছে বলে তিনি জানান।

শিল্পমন্ত্রী আজ বিসিকের ৭৬টি বিসিক শিল্পনগরীতে ওয়ানস্টপ সেবা চালুর লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ননধর্মী দুই দিনব্যাপী ‘নাগরিক সেবা উদ্ভাবন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনকালে এ নির্দেশনা দেন। ভার্চ্যুয়ালি এ কর্মশালা আয়োজন করা হয়।

বিসিক পরিচালক (দক্ষতা ও প্রযুক্তি) ড. মোহা: আব্দুস ছালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিসিক চেয়ারম্যান মোঃ মোসতাক হাসান এনডিসি। এতে দেশের সকল শিল্পনগরি কর্মকর্তা, জেলা পর্যায়ে কর্মকর্তা এবং বিসিক পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বিসিকের ইতিহাস জড়িত। বঙ্গবন্ধু ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ থেকে ৩০ মে ১৯৫৭ পর্যন্ত তদানিন্তন কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও গ্রাম সহায়তা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র শিল্প কর্পোরেশন (ইপসিক) প্রতিষ্ঠা করেন, যা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) নামে তৃণমূল পর্যায়ে শিল্পায়ন কার্যক্রম জোরদারে অবদান রাখছে। বিসিকের মাধ্যমে ইতোমধ্যে গ্রাম-গঞ্জে হাজার হাজার শিল্প কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এজন্যই দেশের শিল্পখাত জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

করোনা মহামারীকালীন বিসিকের কার্যক্রমের প্রশংসা করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ৩১ দফা নির্দেশনার আলোকে স্বাস্থ্য-বিধি অনুসরণ করে বিসিক শিল্পনগরির কারখানাগুলো চালু রাখা হয়েছে। এসব শিল্প ইউনিটে ভোগ্য পণ্য উৎপাদন, মাঠে লবণ চাষ, লবণ মিলগুলোতে আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন এবং সাভার চামড়া শিল্পনগরির ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত অব্যাহত রয়েছে।

করোনা প্রতিরোধকমূলক পণ্য যেমন-পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, মেডিক্যাল অক্সিজেন, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, জীবানুনাশক ফ্লোরক্লিনারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ভোগ্য পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে বিসিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিল্পমালিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি বিসিক শিল্পনগরিগুলোতে উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখতে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, করোনার ফলে বাংলাদেশে শ্রমঘন শিল্প স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অনেক বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে দেশেই বিশ্বমানের বিনিয়োগ সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে কার্যকর ওয়ানস্টপ সেবা প্রদানের উপযোগী উদ্ভাবনী কৌশল খুঁজে বের করার তাগিদ দেন।

তিনি বিসিক গৃহিত মাস্টার প্লানের আওতায় ২০৩০ সাল নাগাদ ২০ হাজার একর জমিতে ৫০টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপন, ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃজন, উদ্যোক্তাদের পণ্য বিপণনে সহায়তা দিতে অনলাইন মার্কেটিং প্লাটফর্ম তৈরি এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য ৫টি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ৭২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বিসিকের ভূমিকা জোরদারের আহবান জানান।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিসিক প্রধান কার্যালয়, ৪টি আঞ্চলিক কার্যালয়, ৭৬টি শিল্পনগরী, ৬৪ শিল্প সহায়ক কেন্দ্র, ১ টি লবণ কেন্দ্র, ৬ টি মৌচাষ কেন্দ্র, ১ টি চামড়া শিল্পনগরি ও ১৫ টি দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৬০০০ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। নতুন উদ্যেক্তা তৈরি এবং দেশের লাখ লাখ বেকার যুবকের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে বিসিক কাজ করছে। ‘নাগরিক সেবা উদ্ভাবন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের জন্য বিসিকের সেবা সহজলভ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 5 =

Back to top button