Lead Newsজাতীয়

শেষ হাসি খামারি-ব্যাপারীদের মুখেই

রাজধানীতে কোরবানি পশুর হাট বসার পর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেখানে পশু নিয়ে আসেন খামারি, ব্যাপারী ও গৃহস্থরা। প্রথম প্রথম তারা কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে ছিলেন। কারণ, আগে যারা পশু বিক্রি করে গেছেন তাদের অনেকেই লস করে ঢাকা ছেড়েছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তের আশায় যারা ছিলেন, তারাই শেষ হাসি হেসেছেন।

বলা যায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে তারা ছক্কা হাকিয়েছেন। কারণ এ সময়ের মধ্যে রাজধানীর হাটগুলোতে পশুর সংকট দেখা দেয়। ক্রেতারা এক হাট থেকে অন্য হাটে ছুটে বেড়ান কাঙ্ক্ষিত পশুর খোঁজে। এ সুযোগে যারা এতদিন পশু ধরে রেখে ছিলেন, তারা কাঙ্ক্ষিত মূল্যেই তাদের পশু বিক্রি করতে সক্ষম হন।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে গত সাতদিন ধরে অবস্থান করছিলেন কুষ্টিয়া থেকে আসা আল-আমীন। তিনি ২২টি গরু নিয়ে গাবতলীর হাটে আসেন। বৃহস্পতিবার সারাদিন পর্যন্ত তিনি ১০টি গরু বিক্রি করেন। গরুগুলো বিক্রি করে লাভ-লোকসান মিলে সমান সমান দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, অবশিষ্ট ১২টি গরু বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। হাটে গরু না থাকায় ক্রেতাদের মধ্যে একপ্রকার কাড়াকাড়ি লেগে যায়। ফলে কাঙ্ক্ষিত মূলে গরুগুলো বিক্রি করতে পারি। গত দুই বছরে যে লোকসান হয়েছিল তা এবার উঠে এসেছে। হাসি মুখেই এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

আল-আমীন বলেন, কুষ্টিয়া থেকে এবার আমরা আটজন (ব্যাপারী) একসঙ্গে এসে ছিলাম। এখন একসঙ্গে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। মনও সবার ভালো।

রাজধানীর হাজারীবাগের রাস্তায় বসানো অস্থায়ী গরুর হাটে চুয়াডাঙ্গা থেকে ১৩টি ষাঁড় আনেন ইসলাম নামের এক ব্যাপারী। শুক্রবার সকালে তিনি বলেছিলেন, পাঁচদিন হলো হাটে আসা। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচটি বিক্রি হয়েছে। সামান্য কিছু লাভ হয়েছে। বাকি আটটি ষাঁড়ের ওপর এখন ভরসা।

শুক্রবার বিকালে তার সঙ্গে ফের কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এ সময় তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত আটটি ষাঁড়ই বিক্রি হয়ে যায়। এগুলো বিক্রি করে দুই লাখ টাকার মতো লাভ হয়েছে। এখন আমরা সন্তুষ্ট। হাসিমুখে এবার বাড়ি ফিরতে পারব।

পাবনার ঈশ্বরদী থেকে রমজান ব্যাপারী এসেছেন রাজধানীর আফতাব নগর হাটে। তিনি ১৮টি ষাঁড় আনেন। প্রত্যেকটির দাম হাকান দুই লাখের ওপরে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় কথা হয় তার সঙ্গে। বলেন, এখনও আশাবাদী, ষাঁড়গুলো কাঙ্ক্ষিত মূল্যে বিক্রি হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসার সঙ্গে লাভ-লোকসানের একটা সম্পর্ক আছে। বর্তমানে আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি। এর মধ্যেও পাবনা থেকে ট্রাক ভাড়া করে হাটে এসেছি। লাভে বিক্রি করতে পারলে করব, না হলে ষাঁড়গুলো ফিরিয়ে নিয়ে যাব। আরেকটা বছর পালন করে পরের বছর বিক্রি করব।

‘অনেকে আসছেন, পছন্দ করছেন, ভালো দামও বলছেন। কিন্তু কেউ কেউ এসে এমন দাম বলছেন যেন আমরা ঠেকায় পড়েছি। কসাইকে দিলেও এর চেয়ে বেশি দাম পাব। সামনের বছর পর্যন্ত এগুলোকে লালন-পালন করার সামর্থ্য তো আছে, ভয় কী?’

শুক্রবার বিকালে তার সঙ্গে ফের কথা হয় জাগো নিউজের। এ সময় তিনি বলেন, দৃশ্যপট বদলে যায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে। রাত ১০টার পর যারা ষাঁড় ধরেছেন, তারা আর ছাড়েননি। এর আগে আমার যে ষাঁড়ের দাম এক থেকে দেড় লাখ টাকা উঠেছিল সেগুলো দুই থেকে সোয়া দুই লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

শেষপর্যন্ত যারা ধৈর্য ধরে থাকতে পেরেছেন তারাই লাভবান হয়েছেন— বলেন রমজান ব্যাপারী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × three =

Back to top button