Lead Newsজাতীয়

শোকজ করা হলো স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে

রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে করোনা ডেডিকেটেডের চুক্তি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে করা হয় বলে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটির মহাপরিচালককে শোকজ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শারমিন আকতার জাহান স্বাক্ষরিত এই অফিস আদেশে রবিবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় তাকে শোকজ করা হয়। ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কী বোঝাতে চেয়েছেন সে বিষয়ে তার কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

আদেশে বলা হয়, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছে। প্রসঙ্গত, যেকোনও হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির আগে তা সরেজমিন পরিদর্শন, হাসপাতাল পরিচালনার অনুমতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি, জনবল ও ল্যাব ফ্যাসিলিটি বিশ্লেষণ করে বিবেচিত হলেই চুক্তি করার সুযোগ রয়েছে। রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তির আগে কী কী বিষয় বিবেচনা করা হয়েছিল, চুক্তি করার শর্তগুলো প্রতিপালনে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে কী বোঝানো হয়েছে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রদান করার নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এর আগে শনিবার (১১ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্চ মাসে যখন কোনও হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি নিচ্ছিল না, তখন রিজেন্ট হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটেড হিসেবে চুক্তি করার আগ্রহ প্রকাশ করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর সে সময় রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে। এই চুক্তির আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে চিনতেন না, পরিচয় থাকা তো দূরের কথা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি গ্রুপের প্রতারণার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়। এতে বলা হয়েছে, রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিমের প্রতারণার খবর বেরিয়েছে, কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতর তার বিষয়ে আগে অবহিত ছিল না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রোগী ভর্তি নেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এর আগে ক্লিনিক দুটি পরিদর্শন করে চিকিৎসার পরিবেশ উপযুক্ত দেখতে পেলেও তার লাইসেন্স নবায়ন ছিল না। লাইসেন্স নবায়নের শর্ত দিয়ে রিজেন্টের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হয় গত ২১ মার্চ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই চুক্তির দিনের আগে অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে সাহেদের ‘পরিচয় তো দূরে থাক, তাকে আগে কখনও দেখেননি তিনি’। তবে সমঝোতার পর বেশ কয়েকবার সাহেদ অধিদফতরে এসেছেন। এ সময় সাহেদ তার সঙ্গে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির যোগাযোগ আছে, তার হাসপাতালে কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তির কোভিড আক্রান্ত আত্মীয় ভর্তি আছেন সেসব বলার চেষ্টা করতেন।

এতে আরও বলা হয়, গোয়েন্দা ও অন্যান্য সূত্রে রিজেন্ট হাসপাতাল নিয়ে তাদের কাছে অভিযোগ আসছিল। এর ভিত্তিতে গত ৬ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে র‌্যাব অভিযান চালায়।

রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে অধিদফতরের সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে অধিদফতরের অবস্থান ‘পরিষ্কার’ এবং একটি ‘ভালো কাজ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতারিত হয়েছে’ বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। এ কারণে ৭ জুলাই হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।

একই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিষয়েও তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানানো হয়। বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সমন্বয়ক আরিফুল চৌধুরী ওভাল গ্রুপ লিমিটেড নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের স্বত্বাধিকারী। ওভাল গ্রুপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ ২০১৮-এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে।

কোভিড সংকট শুরু হওয়ার পর আরিফুল চৌধুরী অধিদফতরে এসে জানান, জেকেজি দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলে বাংলাদেশে কিছু বুথ স্থাপন করতে চায়। ওভাল গ্রুপের সঙ্গে আগে থেকেই কাজের অভিজ্ঞতা থাকার কারণে তাদের অনুমতি দেওয়া যায় বলে মনে করে স্বাস্থ্য অধিদফতর বা মন্ত্রণালয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রতারণার অভিযাগ পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য অধিদফতর জেকেজি গ্রুপের সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল করে।

বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলে, ‘ইদানীং কোনও স্বার্থান্বেষী মহল কল্পিত ও মিথ্যা তথ্য নিয়ে গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সুনাম নষ্ট করার প্রয়াস চালাচ্ছে’।

আরও বলা হয়, ‘কোনও কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি অসততা বা অন্যায়ের আশ্রয় নেন, সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের অবস্থান স্পষ্ট। অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী যথাযথ শাস্তি হোক তা সবাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতিগত সাধারণ সীমাবদ্ধতাগুলোকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সহানুভূতির বদলে তির্যক মন্তব্য এবং খণ্ডিত ও বিকৃতভাবে তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। অশালীনভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ব্যক্তিগত চরিত্র হননের প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এসবের পেছনে হীন ব্যক্তিস্বার্থ কাজ করে বলে আমরা মনে করি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা এখন মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। ফলে আরও বেশি করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ অপরাধ করলে তদন্তেই তা ধরা পড়বে এবং শাস্তিও হবে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + 5 =

Back to top button