Breakingদেশবাংলা

সড়ক তৈরির নামে কী হচ্ছে এসব!

খোয়ার আস্তর, পানি ছিটানো, রোলিং, পুনরায় গুঁড়া খোয়ার আস্তর, পুনরায় রোলিং, সড়ক পরিষ্কার, তরল বিটুমিনের আস্তর-এর কোনো ধাপ অতিক্রম না করেই সরাসরি কার্পেটিং করা হচ্ছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের একটি সড়ক। সড়ক নির্মাণে এমন ভয়াবহ অনিয়মে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, সড়কটি ছয় মাসও টিকবে না। তবে ঠিকাদার বলছেন, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে এভাবে সড়ক তৈরিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। এদিকে এ নিয়ে একেবারেই উদাসীন উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর। অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমানকে ম্যানেজ করেই এমন দায়সারা কাজ করছেন ঠিকাদার।

জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে মির্জাগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালতলী থেকে জিসি ছৈলাবুনিয়া স্লুইসগেট পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়ক পুনঃনির্মাণে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে রেট কোটেশনের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে দুই কোটি একাশি লাখ টাকায় কাজটি পায় পটুয়াখালীর মেসার্স এনায়েতুর রহমান এন্টারপ্রাইজ।

নিয়ম আছে, কার্পেটিং সড়ক নির্মাণের আগে খোয়ার আস্তরের পর পানি দিয়ে রোলিং করতে হবে, পরে গুঁড়া খোয়ার আস্তর দিয়ে পুনরায় রোলিং করতে হবে। এরপর বিটুমিনের তরল আস্তর (প্রাইমকোড) দিয়ে তার ওপরে বিটুমিন মিশ্রিত পাথরের খোয়া দিয়ে কার্পেটিং করা হবে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, ওই সড়কটি নির্মাণে এসব ধাপের একটিও শেষ করা হয়নি। নিম্নমানের ইটের খোয়ার ওপর হালকা রোলিং করে নিম্নমানের খোয়ার সঙ্গে নামে মাত্র বিটুমিনের মিশ্রণ ধুলাবালি ও খড়কুটোর মধ্যেই কার্পেটিংয়ের কাজ করছেন ঠিকাদার। এছাড়া নির্মাণকাজে ব্যবহৃত পাথর খোয়ার গ্রেডেশন নেই (সঠিক মাপ)। যার ফলে সড়কটি ৬ মাসও টিকবে না বলে ধারণা স্থানীয়দের। কাজের শুরুর দিকে ডিজাইন অনুযায়ী মাটির কাজও করেননি ঠিকাদার।

স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। কেউ এ অনিয়মের প্রতিবাদ করলেও তাকে নানাভাবে অপমান অপদস্থ হতে হয়।

নাম প্রকাশ না করে একাধিক ঠিকাদার জানান, উপজেলা প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমানকে প্রতিটি কাজের বিপরীতে যে পরিমাণ উপঢৌকন দিতে হয় তাতে ভালো মানের কাজ কোনো ঠিকাদারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। আবার যদি উপঢৌকন না দিয়ে কাজের মান ভালো করা হয় তখন বিল উত্তলনের সময় নানা টালবাহানা করেন ওই প্রকৌশলী।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. এনায়েতুর রহমান বলেন, ‘নির্মাণ সামগ্রীর দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কি শতভাগ কাজ করে জমি-জমা বিক্রি করব? ঠিকাদারি করে পথের ভিখারি হইছি।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন পটুয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. লতিফুর রহমান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × four =

Back to top button