Lead Newsকরোনাভাইরাসস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

করোনাযুদ্ধের সম্মুখযোদ্ধাদের জন্য আমরা আসলেই কী করছি?

স্বাস্থ্য অধিদফতর সপ্তাহখানেক আগে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে করোনাক্রান্ত রোগীদের সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের অবস্থান এবং কোয়ারেন্টিনের জন্য ১৯টি হোটেলের নাম প্রস্তাব করলেও এখনো সেই সুবিধা পাননি জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকর্মী।

সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো পর্যন্ত হাতেগোনা যেসব স্বাস্থ্যকর্মী ওই সুবিধা পেয়েছেন, তাদের থাকতে হচ্ছে অনেকটা অপরিকল্পিত পরিবেশে। এভাবে চলতে থাকলে ৮/১০ দিন পর চিকিৎসক বা নার্স পাওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সেবা প্রত্যাশীরা। এদিকে হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগই করেনি।

স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় গত ১১ এপ্রিল রাজধানীর মোট ১৯টি অভিজাত আবাসিক হোটেলের প্রায় ৬শ’ রুমের তালিকা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। যেখানে থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে যাওয়া আসা করার কথা।

তবে পরিচয় গোপন রেখে স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেন, উত্তরা ও মিরপুরে মাত্র তিনটি হোটেলে কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীর থাকার ব্যবস্থা হলেও বাকিরা বাসা থেকেই যাওয়া আসা করছেন।

ভুক্তভোগী এক নার্সের ভাষ্য, ‘কুর্মিটোলার দেড়শ নার্স ঐ হাসপাতালের একটা ওয়ার্ডের মধ্যেই থাকে।’

আরও এক নার্সিং স্টাফ জানান, ‘প্রত্যেকটা জায়গায় যেসব নার্স আছে, যারা সেবা দিচ্ছেন, তাদের টোটালি আলাদা কোনো জায়গায় রাখা হচ্ছে না। তারা পরিবারের কাছে যাচ্ছে, বাজার ঘাটে যাতায়াত করছে। আমাদের জীবনেরও একটা মায়া আছে। যার কারণে আমরা চাকরি ছেড়ে দেবার চিন্তা করতে হচ্ছে।’

আর যারা হোটেল পেয়েছেন তারা বলছেন, করোনা পজেটিভ পেলে তাদেরকে হোটেল থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনই ভুক্তভোগী এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সকালে অ্যাম্বুলেন্স আসবে, তুমি বাসায় অথবা হসপিটালের তিন তলায় চলে যেও। এখন আমার বাসায় ছোট ছোট তিনটা বাচ্চা আছে, আমার স্ত্রী আছে। এখন এটা স্পষ্টত আমার প্রতি একটা অমানবিক আচরণ।’

ভুক্তভোগী আরেক নার্স বলেন, ‘আমরা যদি এখন একরুমে তিনজন না থাকি, তাহলে বাসায় চলে যেতে হবে। আমরা সবাই পজেটিভ রোগী নিয়ে কাজ করি বিধায় বাসায় যাওয়াও তো পরিবারের জন্য নিরাপদ নয়।’

ভুক্তভোগী এক চিকিৎসক বলেন, ‘এই দায়িত্বহীনতার কোনও জবাব নেই। এখন যে অবস্থা, তাতে হয়তো আগামী ৭ দিন ডাক্তার পাওয়া যাবে..।’

অন্যদিকে, হোটেল মালিক সমিতি বলছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কেউ যোগাযোগ না করায় তারা এখনও কোনও প্রস্তুতি শুরুই করেননি।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল এসোসিয়েশনের সচিব মহসিন হক হিমেল বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কেউ যোগাযোগ না করায় এখনও কোনও প্রস্তুতি শুরুই করা হয়নি। এমন কি কোনও চিঠিও আসেনি।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর মহাপরিচালক আবুল আজাদ বলেন, ‘আপনারা ভাই আছেন অন্য কাজ করেন তো… ডাক্তাররা কোথায় থাকবে এটা দেখার দরকার নাই। মানুষ রাস্তায় বের হবে না, ওই গুলো দেখেন। রোগী বেড়ে যাচ্ছে.. আর ডাক্তার কোথায় থাকবে সেইটা আমরা দেখছি। আপনারা রোগী যাতে হাসপাতালে না আসে সেই ব্যবস্থা করেন।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 5 =

Back to top button