সপ্তাহ ব্যবধানে মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের ২ কমিটি অনুমোদন
এক সপ্তাহের ব্যবধানে জাতীয় শ্রমিক লীগ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার দুটি কমিটির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন নেতাকর্মীরা।
অনেকের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদ্যমান পুর্নগঠিত কমিটি থাকা সত্ত্বেও আরেকটি কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। এতে প্রশ্নের মধ্যে পড়েছে আওয়ামী লীগের চলমান শুদ্ধি অভিযান নিয়ে। বিভ্রান্ত নেতা-কর্মীরা তাই দলীয় প্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ইউএনবি এক প্রতিবেদনে জানায়, জাতীয় শ্রমিক লীগের প্যাডে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত মানিকগঞ্জ জেলা কমিটি অনুমোদনের কাগজপত্রে দেখা যায়, গত ১৫ অক্টোবর বাবুল সরকারকে সভাপতি ও কাজী মতিউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয় শ্রমিক লীগ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় কমিটি।
পাঁচদিন পর ২০ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ জাতীয় সংসদের ন্যাম ভবনে মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের কার্যালয়ে গিয়ে বাবুল সরকারের হাতে ওই অনুমোদনের কপি তুলে দেন। এসময় সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়, মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কমিটি মো. আব্দুল জলিলকে সভাপতি ও মো. হানিফ আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই কমিটি ঘোষণা করেন।
যোগাযোগ করা হলে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ বলেন, ‘৭ অক্টোবরের কমিটির ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই!’
তবে মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি বাবুল সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক হানিফ আলীর দ্বন্দ্বের কারণে দুটি কমিটি জমা পড়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।
এদিকে, দুটি কমিটির মধ্যে হানিফ আলীর কমিটিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল মজিদ ফটো সুপারিশ করেছেন।
অপরদিকে, বাবুল সরকারের কমিটিতে মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়, মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন সুপারিশ করেন।
ন্যাম ভবনে গিয়ে এমপি দুর্জয় ও মমতাজ বেগমের উপস্থিতিতে অনুমোদিত কমিটি হস্তান্তরের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ বলেন, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়!’
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, ‘আমি সেখানে যায়নি এবং সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে আমাকে কেউ বলেনি।’ সেই সাথে গত ৭ অক্টোবরের ঘোষিত কমিটিতে তার স্বাক্ষরের কথা অস্বীকারও করেন তিনি।
৭ অক্টোবরের ঘোষিত জেলা শ্রমিক লীগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ আলী জানান, ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর বাবুল সরকারকে সভাপতি এবং তাকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের কমিটি অনুমোদন দেন।
‘কিন্তু দীর্ঘ ২২ মাস অনুপস্থিত থাকা এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে আলোচনা সাপেক্ষে জেলা কমিটির সভায় ৭১ সদস্যের মধ্যে ৫৫ জনের উপস্থিতি ও স্বাক্ষরের ভিত্তিতে বাবুল সরকারকে বহিষ্কার করা হয় এবং ৭ অক্টোবর আব্দুল জলিলকে সভাপতি করে কমিটি পুর্নগঠন করা হয়,’ যোগ করেন তিনি।
কিন্তু এক সপ্তাহ না পেরোতেই সেই বাবুল সরকারকে সভাপতি করে আরেকটি কমিটির অনুমোদন দেয়ায় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দলীয় কর্মকাণ্ড। তাই এ কমিটি (২০ অক্টেবরের কমিটি) বাতিলের দাবিতে গত ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বরাবর আবেদন করেছেন মো. হানিফ আলী।
এদিকে মানিকগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এবং মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক লীগকে কলঙ্কমুক্ত এবং আরও গতিশীল করতে ৭ অক্টোবর কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।
‘কিন্তু অর্থের বিনিময়ে দুষ্টচক্রের প্রভাবে একটি বৈধ কমিটিকে বাদ রেখে সাত দিনের মাথায় আরেকটি কমিটির অনুমোদন দিয়ে দলের ক্ষতি করা হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের এমন দূরাবস্থায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন আওয়ামী লীগের এ স্থানীয় নেতা।
এ ব্যাপারে ১৫ অক্টোবর ঘোষিত কমিটির সভাপতি বাবুল সরকার বলেন, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ আলীর সাথে দ্বন্দ্বের কারণে জেলা কমিটির মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও দুজনেই আলাদা আলাদা কমিটি কেন্দ্রের কাছে জমা দিই। দুই কমিটিতেই নেতারা সুপারিশ করেন। গত ১৫ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কমিটি তার ও হানিফ আলীর অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় তার দাখিলকৃত কমিটি অনুমোদন দেন। এই কমিটিকে যারা অবৈধ বলেন তারা আসলে দল করেন কিনা সন্দেহ আছে।
প্রতিহত করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পেশি শক্তি দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করা যায় না। সময় এলেই এর উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।
এদিকে মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগ বৃহস্পতিবার জেলা শ্রমিক লীগের কার্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। ওই প্রতিবাদ সমাবেশে বাবুল সরকার ও মতিউর রহমানের কমিটিকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত সমন্বয়ে ওই কমিটির কোন কর্মসূচি মানিকগঞ্জে পালন করতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেন নেতাকর্মীরা।