Lead Newsজাতীয়

সিনহা হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনঃ ওসি প্রদীপসহ ৬ আসামির জামিন আবেদন নাকচ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে অভিযোগটি গঠন করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল।

সেই সঙ্গে মামলার ১০ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিতে সমন জারি করা হয়েছে। তাছাড়া মামলার অন্যতম আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতসহ ছয়জন আসামির জামিন আবেদন নাকচ করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ওসি প্রদীপসহ মামলার ১৫ জন আসামি। আসামিদের আদালতে আনা–নেওয়ার ক্ষেত্রে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ২৭ ও ২৮ জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। এই দুই দিনে মামলার প্রথম থেকে ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। এই ১০ জন আসামিকে নির্ধারিত সময়ে আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য সমন জারি করা হয়েছে। সিনহা হত্যা মামলার মোট সাক্ষী ৮৩ জন।

আসামি প্রদীপের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে অন্তত ২০ জন আইনজীবী। সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ জড়িত নন দাবি করে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু সরকারি কৌঁসুলি ও বাদীপক্ষের আইনজীবীদের বিরোধিতায় আসামিদের জামিন নাকচ করা হয়। শুনানি শেষে ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামিকে কড়া নিরাপত্তায় পুনরায় কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

শুনানি শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, সিনহা হত্যার সঙ্গে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ মোটেও জড়িত নন। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের যে জিরো টলারেন্স নীতি, ওসি প্রদীপ সেই দায়িত্বই পালন করেছেন। ওসি প্রদীপ মাদক নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছিলেন। রানা দাশ গুপ্ত বলেন, অভিযোগপত্রে মেজর সিনহাকে গলায় বুট জুতা দিয়ে (ওসি প্রদীপ) চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তা পাওয়া যায়নি।

আইনজীবীরা জানান, গত ৯ জুন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাবেক ওসি প্রদীপ ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের জামিন আবেদন করা হয়েছিল। আজ ২৭ জুন জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ঢাকা থেকে রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্ব একদল আইনজীবী কক্সবাজার আসেন।

২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। এতে সিনহা হত্যার ঘটনা পরিকল্পিত এবং ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এ মামলায় ১৫ জন আসামি কারাগারে আছেন। তাঁদের মধ্যে নয়জন পুলিশ সদস্য। তাঁরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আবদুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

দালত সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে আনা হয়েছিল।মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল বিচারিক আদালতে এই মামলার শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং সরকারের বিধিনিষেধের কারণে কার্যক্রম স্থগিত ছিল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 3 =

Back to top button