জাতীয়

সবাইকে চিকিৎসা, খাদ্য ও কৃষি সহায়তা দেয়ার নির্দেশ সেনাপ্রধানের

যুদ্ধংদেহী মনোভাব ত্যাগ করে মানবিকতার বর্ম পরে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে সেনা সদস্যদের কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার এই নির্দেশনার প্রতিফলন প্রতিটি পদে পদে রাখছে বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা।

করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ১৬ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন। তার প্রথম নির্দেশনাই ছিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত এই করোনা মোকাবেলার যুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে অকুণ্ঠচিত্তে ঝাঁপিয়ে পড়ার।

‘আমরা সৈনিক, আমরা সব সময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।’- লকডাউনের শুরুতে এভাবেই দৃঢ় চিত্তে কথাগুলো বলেছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

তার কণ্ঠের দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি আজ বাংলাদেশ জুড়ে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রান্তিক অঞ্চল পর্যন্ত চিকিৎসা, খাদ্য ও কৃষি সহায়তা মানুষে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।

‘কোভিড-১৯’ ভাইরাসের বিরুদ্ধে চলা এই যুদ্ধে তার নির্দেশনা মেনে একবারও দ্বিধা না করে মাঠে নেমে যায় সেনাবাহিনীর ৭ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি সদস্য।

প্রাথমিকভাবে করোনা মোকাবেলায় মানুষকে সতর্ক করা এবং লকডাউন কার্যকরের জন্য টহল দেয়ার মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত মানুষ দেখতে পেয়েছে সেনাবাহিনীর মানবিক রূপ।

প্রতিবার দুর্যোগ প্রবণ অঞ্চলে সেনাবাহিনী সহায়তা নিয়ে ছুটে গেলেও তাদের কার্যক্রম সেভাবে দেখা হয়নি প্রান্তিক মানুষের। এবার করোনার মত বিরল এক বৈশ্বিক দুর্যোগে সামনে থেকে সেনাবাহিনীর মানবিক লড়াই দেখছে সকলে।

জনগণকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে ধৈর্য, সহনশীলতা ও সৎ সাহসের পরিচয় দিয়ে জনগণের পাশে থেকে জনগণের আস্থা অর্জনের আহ্বান জানান সেনাবাহিনীর প্রধান।

আর সে কারণেই কাঁধে করে খাদ্য সহায়তা নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসছে সেনা সদস্যরা। আর সেটাও নিজেদের রেশনের থেকে বাঁচিয়ে।

সেনাপ্রধানের নির্দেশেই বেসামরিক প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য সকল বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে লকডাউন কার্যকর ও চিকিৎসা কার্যক্রমে সহায়তা করে আসছে সেনাবাহিনী।

সেনাপ্রধান বলেন, ‘চলমান করোনা যুদ্ধে সিএমএইচ-সহ মেডিক্যাল কোরের সকল সদস্যগণ প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

আপনাদের এই সেবা এবং ত্যাগ, দেশ ও সেনাবাহিনী শ্রদ্ধাভরে স্মরণে রাখবে। আমরা সবসময় আনাদের পাশে আছি।’

তার এই নির্দেশনা মেনে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি প্রান্তিক অঞ্চলে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে সেনা সদস্যরা। দেশপ্রেম আর মানবিকবোধ থেকেই মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজেরা বিনামূল্যে ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছেন।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশে এমন সামাজিক কার্যক্রমের দারুণ সুনাম রয়েছে যা ‘সিমিক’ হিসেবে পরিচিত। নিজেদের চিরায়ত সেই ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটছে এবার দেশের প্রতিটি এলাকায়।

এতে করে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত প্রতিটি মানুষের আস্থা আর ভালোবাসার অপর নাম হয়ে উঠেছেন সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরা।

সবাই একবাক্যে সেনা চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় নিজেদের সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রায় প্রতিদিনই দেশের প্রতিটি এলাকায় জ্বর, ডায়াবেটিস, পেটের পীড়া ও পুষ্টি হীনতায় ভোগা রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ দিচ্ছেন সেনা চিকিৎসকরা।

নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার মনোভাব দেখিয়া জনগণকে সচেতন করে অর্পিত দায়িত্ব পালনে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আর সে কারণেই সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ দেশের খাদ্য সংকট মোকাবেলায় প্রথমসারীর যোদ্ধা কৃষকদের হাতে উন্নত জাতের বীজসহ কৃষি সহায়তা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন।

অভ্যন্তরীণ কৃষিজ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে অনেক জেলাতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের উৎসাহী করছেন সেনা সদস্যরা।

এমনকি যারা মৌসুমি কৃষক তাদেরকেও কৃষি উৎপাদনে আগ্রহী করতে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করেছে সেনাবাহিনী। সেই সঙ্গে কৃষি সহায়তা বিভিন্ন উপকরণও প্রদান করছে তারা।

সেনা প্রধানের নির্দেশে করোনা মহামারী মোকাবেলায় এভাবে সর্বক্ষেত্রে অকুতোভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনীর এক সূত্র জানায়, বর্তমানে যেভাবে দেশ জুড়ে চিকিৎসা সেবা, খাদ্য সহায়তা ও কৃষি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী, একইভাবে এই মহামারী অতিক্রম করার পর দেশ গঠনের জন্য কাজ করে যাবে তারা।

‘সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে’ এই ব্রত নিয়ে দেশের যে কোন কল্যাণে কাজ করে যেতে সর্বদা প্রস্তুত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + fifteen =

Back to top button