পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় নির্মাণাধীন গার্ডার ব্রিজ ভেঙে খালে পড়েছে। কুয়াকাটা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের দোভাষীপাড়া খালের উপর নির্মিত গার্ডার ব্রিজটি রোববার সকালে ভেঙে পড়ে।
দুর্ঘটনার পরপরই নির্মাণ শ্রমিকরা পালিয়ে যান। এর ফলে দুই ইউনিয়নের সঙ্গে কুয়াকাটা পৌরসভার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫.৫ মিটার প্রস্থের সেতুটি দুই গার্ডারের মধ্যখান দিয়ে ভেঙে যায়।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ২ কোটি ২৬ লাখ ১৫ হাজার ৮৮৩ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সরকারের (জিওবির) অর্থায়নে কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় পৌরসভার দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি চলমান রয়েছে। সেতুর প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্নের পথে ছিল। চলতি বছর ২৬ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কুয়াকাটা পৌর কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানান, সেতুর স্থানে একটি আয়রন সেতু ছিল। সেই আয়রন সেতুটি ভেঙে গিয়ে দীর্ঘদিন পড়ে থাকে। সেখানে গার্ডার ব্রিজের কাজ চলছিল। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকেই পাওয়া যায়নি।
কাগজে কলমে এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সৈয়দ মো. সোহেল অ্যান্ড দীপ এন্টারপ্রাইজের নাম থাকলেও মূলত মামুন নামে এক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেয় এ কাজটি। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক পটুয়াখালীর টাউন কালিকাপুরের মো. আজাদুল ইসলাম বলে জানা যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটির নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী, সিমেন্ট কম ব্যবহারসহ ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ না করার কারণে এমনটি হয়েছে। নির্মাণ কাজ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়রা প্রকৌশলী ও পৌর মেয়রের কাছে অভিযোগ করে এলেও তারা এতে কর্ণপাত করেনি।
দোভাষীপাড়ার বাসিন্দারা জানান, সেতুটির মাঝখানে কোনো পিলার নেই। দুটি গার্ডারের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, তাই ভেঙে পড়েছে বলে তাদের ধারণা।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আ. হালিম অভিযোগ করেন, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই সেতুটি ভেঙে পড়ায় গোটা কাজ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এলাকাবাসীর।
সিপিডির লতাচাপলী ইউনিয়ন টিম লিডার মো. শফিকুল আলম বলেন, অপরিকল্পিত নকশা ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করার কারণে সেতুটি ভেঙে পড়েছে।
তিনি বলেন, এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন ১ থেকে দেড় হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। এই সেতু দিয়ে মিশ্রিপাড়া, লতাচাপলী, ধুলাসারসহ পায়রা বন্দরে যাতায়াত করে মানুষজন। দোভাষীপাড়া মাদ্রাসা ও মুসুল্লিয়াবাদ ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এখান দিয়ে চলাচল করে থাকে। সেতুটি ভেঙে পড়ায় এখন এসব মানুষদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুজ্জামান জানান, তিনি গত ২১ জুন কুয়াকাটা পৌরসভায় যোগদান করেছেন। সেতুর নির্মাণ কাজের বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। কী কারণে সেতুটি ভেঙে পড়েছে তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না বলেও তার মন্তব্য।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেতুর নির্মাণ কাজ চলমান ছিল। কাজ শেষ হওয়ার আগেই কেন সেতুটি ভেঙে পড়েছে তা বলতে পারবেন এই প্রকল্পের প্রকৌশলীরা।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।