স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-রিসোর্ট চালুর প্রস্তুতি, অপেক্ষা নির্দেশনার
প্রায় আড়াই মাস ধরে লকডাউনের কবলে পড়েছে পর্যটন শিল্প। এতে বেকার হয়েছে অন্তত ৩৫ হাজারের বেশী শ্রমিক। চরম লোকসানে পড়েছে হোটেল-রিসোর্ট ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
প্রতি বছর ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকে ভরপুর হয়ে উঠে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নগরী কক্সবাজার। চলে পুরোদমে ব্যবসা। কিন্তু এবার বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সেটি আর হয়ে উঠেনি।
এমন পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে ধরে রাখতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে হোটেল-রিসোর্ট মালিকরা।
ব্যবসা চালু হলে পর্যটকের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আচরণ করা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাইড লাইন অনুসারে রিসোর্ট ও হোটেল পরিচালনা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হবে। করোনাকালে সব ধরনের গাইড লাইন মেনে সরকারের নির্দেশে সীমিত পরিসরে হলেও ব্যবসা খুলতে চান রিসোর্ট ও হোটেল মালিকরা।
রিসোর্ট ও হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। স্বাস্থ্য বিধি মেনে কিভাবে করোনাভাইরাসের সময়ে ব্যবসা চলবে তার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিলেই আমরা ব্যবসা চালু করব।
এদিকে, প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের হিসেবে, শুধু রমজান ও ঈদ মৌসুমে দেশের হোটেল ট্যুরিজম খাত ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়েছে। আর ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) বলছে, অ্যাভিয়েশন খাত ছাড়া শুধু হোটেল-রিসোর্টসহ পর্যটনের বিভিন্ন ব্যবসায় এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
অন্যদিকে তারকা হোটেলগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (বিহা) পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চলতি বছরের মে পর্যন্ত তিন মাসে ৫০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির ধারণা দিয়েছে।
অন্যান্য বছর সৈকতের ১১ টি পয়েন্টে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু এবার নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে সেখানে বিরাজ করছে সুনসান নিরবতা। তালাবদ্ধ প্রায় সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল রিসোর্ট। জনমানব শূন্য হয়ে পড়েছে মেরিনড্রাইভ সড়কটিও।
হোটেল দি কক্সটুডের পরিচালক আবু তালেব বলেন, দীর্ঘ সময় হোটেলের কার্যক্রম বন্ধ। একেবারে বেকার হয়ে পড়েছে শ্রমিকরা। মালিকরা চলবে নাকি শ্রমিকদের বেতন দিবে?- এ নিয়ে চরম সংকটে সময় পার করছি। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে কিছুটা হলেও সচল করা হোক।
হোটেল নিসর্গের ব্যবস্থাপক আব্দুল কাদের বলেন, প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক খেয়ে না খেয়ে পড়ে আছে। তাদের পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে দিন পার করছে। এ অবস্থায় যদি হোটেল-মোটেল চালু না হয় তাহলে তো এ শিল্পকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।
কলাতলী-মেরিনড্রাইভ হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর সকল প্রস্তুতি নিয়ে সীমিত পরিসরে হলেও হোটেল-মোটেল রিসোর্ট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হোক। অন্যথায় বড় ধরণের বিপর্যয়ে পড়বে এ শিল্প। যা কাটিয়ে উঠা খুবই কঠিন হবে। তাই দ্রুত এ শিল্প ধরে রাখতে সিদ্ধান্ত পৌছানো জরুরি।
করোনার প্রভাবে সারাবিশ্বে সবচেয় বেশি প্রভাব পড়েছে পর্যটন শিল্পে। ২০০০ সালে সার্স ভাইরাসে পর্যটনে যে ক্ষতি হয়েছিল এবার করোনাতে তারও ১০ গুণ বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।