Lead Newsজাতীয়

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৮৩ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা বলছেন, গত ২ জুন স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা তালিকা যথাযথভাবে হয়নি।

দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে এ নিয়োগে বলেও জানিয়েছেন তারা। ভুক্তভোগীরা আরও অভিযোগ করেছেন, টেকনোলজিস্ট নিয়োগ নিয়ে যে ইমেল আইডি থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে সেটা স্বাস্থ্য অধিদফতরের নয়।

এছাড়া, এই তালিকায় রাখা হয়নি শুরু থেকেই করোনাভাইরাস শনাক্তে কাজ করা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) টেকনোলজিস্টদেরও।

এসব নিয়ে কথা বলতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকের সঙ্গে গত সোমবার রাতে (প্রশাসন) যোগাযোগ করা হয়। বিষয়টি শুনে তিনি মঙ্গলবার ফোন করতে বলেন। তবে ওইদিন একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এ বিষয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেছেন, তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় এ নিয়োগ হয়েছে। বিষয়টির সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

দেশের হাসপাতালগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকায় মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের ঘাটতি ছিল। করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের বিষয়টি আবার সামনে আসে। করোনার নমুনা সংগ্রহ ও ল্যাবরেটরি বাড়ানোর ফলে সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের দাবি ওঠে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন হাজার টেকনোলজিস্ট নিয়োগের নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জুন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে এক হাজার ২০০ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, এক হাজার ৬৫০ জন টেকনিশিয়ান আর বাকিদের কার্ডিওগ্রাফার হিসেবে নিয়োগের কথা বলা হয়। তবে এর মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্তে আগে থেকেই নিয়োজিত থাকায় ১৮৩ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টকে সরাসরি স্থায়ী নিয়োগের জন্য আদেশ দেওয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে।

আইইডিসিআরে কাজ করা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা বলছেন, আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে যারা কোভিড-১৯-এ কাজ করছেন তাদের স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু করোনা শনাক্তে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া এই প্রতিষ্ঠানকে পাশ কাটিয়ে কারা কোন উদ্দেশ্যে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিচ্ছে সেটাও এক রহস্য বলছেন টেকনোলজিস্টরা। আবার সে চিঠিতে যেসব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও এনজিওর নাম রয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগ হয় নিজস্ব নিয়মে।

এদিকে, খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে প্রথম কোভিড নিয়ে কাজ করেছে আইইডিসিআর। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছে তারা। সেই প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে কেন এই তালিকা করা হচ্ছে সেটা বড় প্রশ্ন। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের যদি নিয়োগ দিতে হয় তাহলে আইইডিসিআরের হয়ে যারা এতদিন কাজ করেছেন তাদের অধিকার সবার আগে।’

আইইডিসিআর সূত্র জানায়, কোভিড-১৯-এর নমুনা সংগ্রহ ও পিসিআর ল্যাবে বর্তমানে আছেন ৪৭ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আর সরকারিভাবে আছেন ১৩ জন। এই ৪৭ জন বিভিন্ন প্রজেক্টের হয়ে আইইডিসিআরে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু কোভিড-১৯ আসার পর সবাই করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও ল্যাবে কাজ করছিলেন। কাজ করতে গিয়ে তাদের মধ্যে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, কেউ কেউ সুস্থ হয়ে ফিরে আবার কাজে যোগ দিয়েছেন। অথচ বি‌ভিন্ন প্র‌জে‌ক্টের এই ৪৭ জনের কেউ নিয়োগ পাওয়া ১৮৩ জনের তালিকায় নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট বলেন, ‘জানুয়ারিতে যখন কোথাও কোভিড-১৯-এর জন্য নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়নি, তখন আমরা নমুনা সংগ্রহ করেছি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অপমানের শিকারও হয়েছি। লিফটে উঠতে দিতো না। শেষ পর্যায়ে মত পরিবর্তন করে বলতো, নমুনা দেবে না। অথচ এখন যখন সরকারি চাকরির সুযোগ এলো তখন আমাদের সেখানে রাখাই হয়নি।’

তারা বলেন, ‘জানি না এটি আইইডিসিআর এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনও স্নায়ুযুদ্ধের ফল কিনা, যার মধ্যে আমরা পড়ে গেছি।’ তাদের প্রশ্ন, ‘আইইডিসিআরের টেকনোলজিস্টরা কেন বাদ পড়লো, এ প্রশ্নটা কাকে করলে উত্তর পাওয়া যাবে?’

এদিকে, আইইডিসিআর সূত্র বলছে, ‘আমরা এখনও আশা করতে চাই, কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, যে কারণে আমাদের ফাইল মন্ত্রণালয় পৌঁছায়নি। আমরা নাম জমা দিয়েছিলাম স্বাস্থ্য অধিদফতরে, কোনও কারণে সে নাম মন্ত্রণালয়ে যায়নি। আইইডিসিআরের নামগুলো কেন মন্ত্রণালয়ে যায়নি এর উত্তর স্বাস্থ্য অধিদফতর দিতে পারবে। তবে এটুকু বলতে চাই, আইইডিসিআরের টেকনোলজিস্টদের কারও নাম মন্ত্রণালয়ে যায়নি।’

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আইইডিসিআরের একটি প্রজেক্টে কাজ করছেন এমন একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট বলেন, ‘শুরু থেকে কোভিড নিয়েই আছি আমরা, কিন্তু এখন কাজে মন দিতে পারছি না। আমাদের পরে এসে কোভিড-১৯-এ কাজ করার সুবিধা নিয়ে চাকরি হয়ে গেলো, অথচ দিনের পর দিন কাজ করেও আমাদের নাম নেই।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘প্রথম যখন নমুনা সংগ্রহ শুরু হয় তখন এ প্রতিষ্ঠানের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছে এবং এখনও করছে। তাদের এ তালিকা থেকে বাদ পড়াটা দুঃখজনক।’

মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং কোভিড-১৯ বিষয়ক মিডিয়া সেলের প্রধান মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন কোনও লেনদেন হয়ে থাকলে সেটা চিহ্নিত করা হবে এবং তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। কোনও অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না।’

এদিকে, টেকনোলজিস্ট নিয়োগ সম্পর্কিত আার্থিক লেনদেনের একাধিক অডিও রেকর্ড বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। এ অডিও রেকর্ড সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক যখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তখন তাড়াহুড়ো করে এই তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত এখানকারই কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) বেলাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তবে অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যখন এ নির্দেশ আসে তখন আমি হাসপাতালে ভর্তি। এখন আমি বিষয়টির খোঁজ নিয়েছি। কেবল আইইডিসিআর নয়, আরও প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে তাদের টেকনোলজিস্টদের নামের তালিকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এই সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এখানে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে জানালে মহাপরিচালক বলেন, ‘আমি এটা বুঝি না, এত অল্প সময়ের মধ্যে টাকা-পয়সা নেওয়া দুষ্কর।’ কিন্তু অডিও রেকর্ড রয়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘এটা ওরা নিজেদের মধ্যে আলাপ করেছে, এত অল্প সময়ের মধ্যে এগুলো সম্ভব নয়।’

সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + fifteen =

Back to top button