Breakingধর্ম ও জীবন

হজ পালন সম্পর্কে ইসলামের দিক নির্দেশনা

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ ও উমরাহ পূর্ণভাবে সম্পাদন কর।’ ইসলামের অন্যান্য আমলগুলোর মধ্যে হজ সর্বোত্তম। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলো- সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হলো, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হলো, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন, হজ্জে মাবরূর (কবুলযোগ্য হজ)।’ (বুখারি)

হজ
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম হজ। আরবি হজ শব্দের অর্থ সংকল্প করা বা ইচ্ছা করা। কুরআনুল কারিমে ১০২ বার হজ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। হজ আর্থিক এবং শারীরিক ইবাদত। তাই আল্লাহ তাআলা আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরিপূর্ণভাবে হজ সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ফরজ হজের উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা।

মুসলিম উম্মাহর সক্ষম ব্যক্তিদের ইখলাসের সঙ্গে হজ আদায় করতে হবে। কিন্তু যদি এ ইবাদত ভিন্ন কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য পোষণ করে তবে কখনই তা আল্লাহ তাআলার দরবারে কবুল হবে না বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি বা সাওয়াবের পরিবর্তে গোনাহগার হতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন-
১. وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।’ (সুরা বাইয়্যেনাহ : আয়াত ৫)

২. فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ১১০)

পক্ষান্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম ও একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ সম্পাদনকারীকে গোনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন এভাবে-

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো লোক যদি হজ করে এবং তাতে কোনো রকম অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ না করে তাহলে তার আগের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (তিরমিজি)

আবার হজ পালনের ক্ষেত্রে পবিত্র কাবা শরিফ এবং সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে প্রত্যেক হাজিকে ৭ বার সায়ী তথা প্রদক্ষিণ করতে হয়। আর ঐতিহাসিক এই দুই পাহাড় ও তা প্রদক্ষিণ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ
নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তাআলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কাবা ঘরে হজ বা ওমরাহ পালন করে; তাদের পক্ষে এ দুটিতে (কাবা শরিফ ও সাফা-মারওয়া পাহাড়) প্রদক্ষিণ করাতে কোনো দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকির কাজ করে, তবে আল্লাহ তাআলার অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৮)

হজের অন্যান্য কাজ
এছাড়া, হজের সময় হজ সম্পাদনকারী ব্যক্তিকে নানান কার্যাবলী সম্পন্ন করতে হয়। তাহলো-
১. ইহরাম বাঁধা।
২. তালবিয়া পাঠ করা। বাংলায় উচ্চারণ ও অর্থসহ তালবিয়া-
i) لَبَّيْكَ ا للّهُمَّ لَبَّيْكَ
ii) لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ
iii) اِنَّ الْحَمدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ
iv) لاَ شَرِيْكَ لَكَ

তালবিয়ার উচ্চারণ-
i) লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক,
ii) লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক,
iii) ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্‌ক,
iv) লা শারিকা লাক।

তালবিয়ার অর্থ-
i) আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত!
ii) আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই।
iii) নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার।
iv) আপনার কোন অংশীদার নেই।

৩ পাথর নিক্ষেপ করা।
৪. মাথা মুন্ডন করা।
আর এসবের মধ্যে সর্বোত্তম আমল হচ্ছে- তালবিয়া তথা লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক পাঠ করা। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন কাজটি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, উচ্চঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করা এবং কুরবানির দিন কুরবানি করা।’ (ইবনে মাজাহ)

তাছাড়া পুরুষদের পাশাপশি নারীদেরও হজ পালন করা ফরজ। তবে নারীদের জন্য হজ আদায়ের ক্ষেত্রে মাহরাম পুরুষদের (বৈধ পুরুষ) সঙ্গে নিয়ে হজ পালন করাকে শর্ত রাখা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জন্য হজ পালন করা কে সর্বোত্তম জিহাদ বলে ঘোষণা করেছেন।

হাদিসে এসেছে-
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জিহাদকে আমরা সর্বোত্তম আমল মনে করি। কাজেই আমরা কি জিহাদ করবো না? তিনি বললেন, না; বরং তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল, হজ্জে মাবরূর (কবুল হজ)।’ (বুখারি)

হজের সম্পর্কে এভাবেই পবিত্র কুরআন ও সুন্নায় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আল্লাহর দরবারে হজকে গ্রহণীয়, আখেরাতের জীবনকে সফল ও জান্নাতের সব নেয়ামত ও কেয়ামতের হিসাব সহজ করতে সামর্থ্যবানদের উচিত, একনিষ্ঠ নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী হজ করা। যদিও মহামারি করোনার কারণে হজ পালন বন্ধ রয়েছে; যখনই হজের সুযোগ আসবে; তখন মহান আল্লাহ সামর্থ্যবানদের হজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − 5 =

Back to top button