ধর্ম ও জীবন

হালাল উপার্জন ফরজ ইবাদত

বৈধ ও হালাল উপার্জনের ওপর নির্ভর করা এবং অবৈধ ও হারাম উপার্জন বর্জন করা মুসলিমের জন্য অন্যতম ফরজ ইবাদত। শুধু তাই নয়, এর ওপর নির্ভর করে তার অন্যান্য ফরজ ও নফল ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হওয়া বা না হওয়া। বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন না হওয়ার কারণে অনেক মুসলিম এ বিষয়ে কঠিন বিভ্রান্তির মধ্যে নিপতিত। অনেক ধার্মিক মানুষ রয়েছেন যারা সুন্নাত, মুস্তাহাব ইত্যাদির বিষয়ে অনেক সচেতন হলেও হারাম উপার্জনের বিষয়ে মোটেও সচেতন নন। কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে এটি বক-ধার্মিকতা ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ বলেন : ‘হে রাসূলরা, তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর এবং সৎকর্ম কর। তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবহিত।’

অবৈধ উপার্জন থেকে আত্মরক্ষার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না এবং মানুষের ধনসম্পদ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করার জন্য তা বিচারকদের কাছে পেশ করো না।’ সূরা নিসার ২৯ আয়াতে এরশাদ করা হয়েছে-‘হে মু’মিনরা, তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না; তবে তোমাদের পরস্পর রাজি হয়ে ব্যবসা করা বৈধ।’

কুরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে নিষিদ্ধ অবৈধ লেনদেনের মধ্যে অন্যতম হলো, ওজনে বা মাপে কম দেওয়া, ভেজাল দেওয়া, ধোঁকা দেওয়া, ফাঁকি দেওয়া, সরকার বা জনগণের সম্পদ গ্রহণ করা, সুদ গ্রহণ বা প্রদান, ঘুস গ্রহণ বা প্রদান ইত্যাদি। সূরা মুতাফ্ফিফীন-এর ১ম আয়াতে এরশাদ করা হয়েছে, ‘ওআইল জাহান্নামের ভয়াবহ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে-পরিমাপে কম দেয়, এভাবে কুরআন কারিমে বারবার পূর্ণরূপে ওজন, মাপ ও পরিমাপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সব ধরনের ফাঁকি, কমতি বা কম প্রদানের কঠিন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়েছে। এরূপ করলে পৃথিবীতে কঠিন গজব ও আখেরাতে কঠিন শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘যখন কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ মাপে-ওজনে বা পরিমাপে কম বা ভেজাল দিতে থাকে, তখন তারা দুর্ভিক্ষ, জীবনযাত্রার কাঠিন্য ও প্রশাসনের বা ক্ষমতাশীলদের অত্যাচারের শিকার হয়।’

যে কোনো ধরনের ধোঁকা দেওয়া বা প্রকৃত অবস্থা গোপন করার নামই গিশ্শ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) গিশ্শ বা প্রবঞ্চনা থেকে নিষেধ করেছেন। হাদিসে ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের ফাঁকি বা ধোঁকা দেবে আমাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।’

কুরআন ও হাদিসে নিষিদ্ধ একটি বিষয় হলো গুলূল! সব ধরনের অবৈধ উপার্জনকেই গুলূল বলা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘কোনো নবির পক্ষে অসম্ভব যে তিনি অবৈধভাবে কিছু গোপন করে গ্রাস করবেন এবং কেউ অবৈধভাবে কিছু গোপন করে তাহলে কেয়ামতের দিন সে তা নিয়ে আসবে। অতঃপর প্রত্যেককে যা সে অর্জন করেছে তা পূর্ণ মাত্রায় দেওয়া হবে। তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’

অবৈধ উপার্জনের অন্যতম পদ্ধতি ঘুস। যে ব্যক্তি কোনো কর্মের জন্য বেতন, সম্মানি বা ভাতা গ্রহণ করেন, সেই কাজের জন্য ‘সেবা গ্রহণকারী’, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা অন্য কারও থেকে কোনো ধরনের হাদিয়া, বকশিশ বা বদলা নেওয়াই ঘুস।

এ ছাড়া নেতা, কর্মকর্তা, কর্মচারী, বিচারক প্রমুখকে তাদের কৃপাদৃষ্টি আকৃষ্ট করার জন্য যে হাদিয়া প্রদান করা হয় তা-ও ঘুস বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রহ.) বলেন, ‘ঘুষ গ্রহীতা ও ঘুসদাতাকে লানত অভিশাপ করেছেন রাসূলুল্লাহ (সা.)।’

অবৈধ উপার্জনের অন্যতম হলো রিবা বা সুদ। ঋণ হিসাবে প্রদত্ত অর্থের ওপরে সময়ের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণই ইসলামি শরিয়তে সুদ। এ ছাড়া একই জাতীয় দ্রব্যের লেনদেনে কমবেশি করাও ইসলামে সুদ বলে গণ্য। কুরআন ও হাদিসে অত্যন্ত কঠিনভাবে সুদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এর কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা বাকারাহ-এর ২৭৫-২৭৯ আয়াতে এরশাদ করা হয়েছে, ‘‘যারা সুদ খায় তারা সেই ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে। তা এজন্য যে, ‘তারা বলে, ব্যবসা তো সুদের মতো।’ অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ করেছেন এবং সুদকে অবৈধ করেছেন।” মহান আল্লাহ আমাদের হারাম উপার্জন বর্জনের তাওফিক প্রদান করুন। আমিন!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × one =

Back to top button